ছাত্রলীগ নেতারা ছাত্রদল প্রসঙ্গে অভিযোগ করলে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, তাদের নেতা আর তোমাদের নেতা শেখ হাসিনা কি এক হলো?
মঙ্গলবার ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানান।
সোমবার বিদেশ সফর উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন শেষে গণভবনে ছাত্রলীগের নেতাদের দেড় ঘণ্টার এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠেন। বৈঠকে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যসহ আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহিম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. সাইদুর রহমান হৃদয়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মো. জুবায়ের আহমেদ।
আড্ডায় শেখ হাসিনা বলেছেন, দলাদলির ঊর্ধ্বে থেকে সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে হবে তোমাদের। বিশেষ কোনও নেতাকে প্রাধান্য দিয়ে নয়, কাজ করবে সবাইকে নিয়ে। এসময় ছাত্র নেতাদের বিভিন্ন বিষয়ে দিক-নির্দেশনাও দেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শেখ হাসিনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার দিন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের পানি, মাস্ক, স্যানিটাইজার ও কলম সহায়তা দিচ্ছে অন্যদিকে ছাত্রদল শোডাউন করছে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে না- ছাত্রলীগ নেতারা এমন অভিযোগ জানালে শেখ হাসিনা বলেন, তোমরা তোমাদের কাজ কর। কে কী করলে তাতে মনযোগ দেওয়ার প্রয়োজন নাই। তাছাড়া তাদের নেতা আর তোমাদের নেতা শেখ হাসিনা কি এক হলো?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটি গঠন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাশ আলোচনা তুললে শেখ হাসিনা বলেন, হল কমিটি করে ফেল। তবে সব কাজই ধীরে করা ভালে। তিনি বলেন, ‘সময় নিয়ে কোনও কাজ করলে সেটা নিঃসন্দেহে ভালো হয়।’
এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে শেখ হাসিনার উপস্থিতি নিশ্চিত করার অনুরোধ করেন সনজিৎ। তিনি বলেন, ‘আপা, আপনাকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে হবে।’ প্রতিউত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রধান অতিথি হিসেবে না, দাদি হিসেবে চাও’। এসময় মজা করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমাকে আপা নয়, দাদি ডাকবা তোমরা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের ব্যানারে নানা কর্মসূচির আয়োজনের পেছনে শিবিরসহ অন্যান্য নিষিদ্ধ সংগঠন সংঘবদ্ধ রয়েছে; ছাত্রলীগ নেতারা এমন তথ্য জানালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিবির সবসময়ই ছিল। তারা প্রকাশ্যে কর্মকাণ্ড চালালে মানুষ তো দেখতেই পারবে তাদের অপকর্ম।’
তিনি ছাত্রলীগ নেতাদের বলেন, ‘তোমরা সাধারণের সঙ্গে মিশে সংগঠনের কাজ করো। নীতি আদর্শ নিয়ে কাজ করো।’
এসময় শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতাদের কার কোন জেলায় বাড়ি এই পরিচয় নেন। পরিচয় দেওয়া শেষ হলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, বাহ্, সারাদেশ আছে এখানে। এসময় সেখানে উপস্থিত থাকা দলের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, ‘আপা ঢাকা ও চট্টগ্রাম নাই।’
ছাত্রলীগ নেতারা চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব তুললে শেখ হাসিনা বলেন, ‘না। ২৪-২৫ বছরের পরে কারও লেখাপড়া হয় না। সুতরাং চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর প্রয়োজন নেই।’
উপস্থিত আট নেতার মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও উপস্থিত ছিলেন এই গল্পের আসরে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু চক্র সক্রিয় হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি তোলা হয় নতুন কমিটি দেয়ার। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে ও জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জন নিয়ে শুভকামনা জানাতে গণভবনে যান ছাত্রলীগের এই শীর্ষ নেতারা। সেখানে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় ছাত্রলীগের বর্তমান কর্মসূচি ও কার্যক্রম বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতারা।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, ছাত্রলীগের সব নেতৃবৃন্দ এক এক করে সংগঠনের সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন। পরে প্রধানমন্ত্রী সবার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে বলেন, করোনাকালে ছাত্রলীগের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি অবগত রয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন মহলের বিষয়গুলোও তিনি জানেন। এসবে কান না নিয়ে নিজেদের নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাবার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ধীরে ধীরে ছাত্রলীগের কমিটি করে দেয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন