এখনই বৃহত্তর ঐক্যের চিন্তা বাদ দিয়ে আপাতত যুগপৎ আন্দোলনের পথে হাঁটছে বিএনপি। দলটির নেতাদের মতে, আগে বৃহত্তর ঐক্য বা জোট গঠন করে আন্দোলনে যেতে দেরি হয়ে যাবে। এর চেয়ে কতগুলো কর্মসূচির ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে রাজপথে ঐক্য গড়ে তোলাই যুক্তিযুক্ত বলে মনে করছে দলটি।
জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনের লক্ষ্যে একটি রূপরেখা বা কর্মসূচি শিগগিরই ঘোষণা করবে বিএনপি। সরকারবিরোধী জোটের বাইরে থাকা যেসব দল ওই কর্মসূচিকে সমর্থন করবে, তারাই যুগপৎ আন্দোলনে শামিল হবে বলে আশা করছে দলটি। বিএনপি নেতাদের মতে, যুগপৎ ওই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সরকারবিরোধী আন্দোলন একই পথে গিয়ে দাঁড়াবে; যেটিকে রাজপথের ঐক্য বলে তাঁরা মনে করেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোর মতে, বিএনপির আন্দোলনের রূপরেখার মধ্যে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, সব দলের মতামতের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার, খালেদা জিয়ার মুক্তি, সাজা বাতিল করে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনাসহ আরো বেশ কয়েক দফা দাবি থাকবে।
এসব দাবি ঘোষণার পর সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবে বিএনপি। ওই সংলাপে বিএনপির দলীয় কোনো কর্মসূচির ব্যাপারে দলগুলোর আপত্তি থাকলে বিএনপি তাতে ‘ছাড়’ দেবে। পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনে আগ্রহী দলগুলোর কোনো দাবি থাকলে সেগুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এভাবেই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা এবং অভিন্ন কর্মসূচির ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় বিএনপি।
উদাহরণ দিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারক বলে পরিচিত একজন নেতা বলেন, ‘যেমন—খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি। এটাতে কোনো দলের আপত্তি থাকলে বিএনপির ছাড় দিলে অসুবিধা নেই। কারণ সরকারের পতন হলে খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন, এটি সবাই জানে।’
২০ দলীয় জোটভুক্ত কয়েকটিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদারপন্থী কয়েকটি দল এবং সরকারের বাইরে থাকা বামপন্থী দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গঠন করতে চায় বিএনপি। একটা সময় ইসলামী দলগুলোও ওই আন্দোলনে শামিল হবে বলে মনে করে দলটি। তবে বাম দলগুলোকে নিয়ে একসঙ্গে চলার পথে প্রধান বাধা জামায়াত।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। তবে যুগপৎ আন্দোলন কি না সেটি সময় ও পরিস্থিতি বলে দেবে।’ তিনি বলেন, ‘আন্দোলন শুরু হলে তার গতিই বলে দেবে আমরা কোন দিকে যাব।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘সমমনা দলগুলোকে নিয়ে বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুলবে। আর এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই রাজপথে ঐক্য গড়ে উঠবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যুগপৎ আন্দোলন শুরু হলে ২০ দলীয় জোট বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বহাল থাকবে কি না সে বিষয়টি বিএনপির মধ্যে এখনো অস্পষ্ট রয়ে গেছে। নেতারা এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। যদিও কেন্দ্রীয় নেতাদের তিন দিনের সভায় বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জোর দাবি উঠেছে। পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলন অথবা এক মঞ্চে আন্দোলন গড়ে তোলার পক্ষেও মত এসেছে।
জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনের উদ্যোগটা ভালো। আমি স্বাগত জানাই। কিন্তু সেই আন্দোলনের চরিত্র বা শেপ কেমন হবে সেটি দেখতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে ২০ দলীয় জোট বা জামায়াত এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কী হবে সে বিষয়টি স্পষ্ট করা জরুরি।’
২০ দলীয় জোটের নেতা কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনের ব্যাপারে আমরা সম্মত। কিন্তু সেই আন্দোলনে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট সহযাত্রী, নাকি ২০ দলের সঙ্গে বাম দলগুলো সহযাত্রী সেটি স্পষ্ট করলে ভালো হয়।’
জানতে চাইলে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যুগপৎ পরের বিষয়, আগে দেখি তারা (বিএনপি) কী রূপরেখা দেয়।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপিসহ অন্য দলগুলো তাদের অঙ্গীকার নিয়ে জনগণের কাছে যাক। জনগণের কাছে তারা কতটা গ্রহণযোগ্যতা পায়, তার ভিত্তিতেই বৃহত্তর ঐক্যের মাত্রা চিহ্নিত হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন