আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তৃণমূল পর্যন্ত দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। চলছে ইশতেহার তৈরির কাজ। পাশাপাশি বিএনপির কর্মকাণ্ডের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন তারা। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদের মাঠ দখলের কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গুজব-অপপ্রচারের জবাব দিতে প্রস্তুত করা হচ্ছে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট। কেউ যেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, এজন্য কঠোর নজরদারি থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা ‘মীমাংসিত ইস্যু’। এ নিয়ে কাউকে মাঠ গরম করার সুযোগও দেওয়া হবে না।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্লেন (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান শনিবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছি। বিএনপিও নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে, এটা দেশের গণতন্ত্রের জন্য শুভ। কিন্তু এই প্রস্তুতির শুরতেই তারা এমন কিছু কথা বলেছে যা অসাংবিধানিক, গণতন্ত্র ও আইনবিরোধী। বিএনপির দাবিগুলো অবান্তর। তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল ছিল। কিন্তু সেই ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল বিএনপি। শুধু তাই নয়, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে তারা ধ্বংস করে। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বসার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। নির্বাচন কমিশন সার্চ কমিটির মাধ্যমে হয়, এটাই অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
বিএনপির ধারাবাহিক বৈঠক এবং আন্দোলন কর্মসূচি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আব্দুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমরা এগুলো গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি। তবে এগুলো নতুন নয়। আন্দোলনের হুমকি তো শুরু থেকেই দিয়ে আসছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো-দল হিসেবে তাদের আন্দোলন করার শক্তি-সামর্থ্য কোনোটাই নেই। তাছাড়া তাদের কোনো দাবি জনগণের দাবি নয়। অযৌক্তিক কোনো দাবি নিয়ে মাঠে নামলে তারা আবারও প্রত্যাখ্যাত হবে। বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে দাবির কিছু নেই। বিএনপি বরং শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে একটা পরামর্শ দিতে পারে। তবে সেটা অবশ্যই সংবিধানের আলোকে হতে হবে। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির বৈঠক ও আন্দোলনকে গুরুত্বের সঙ্গে না দেখলেও দলটির কর্মকাণ্ড নিয়ে সতর্ক। বিএনপির দাবিগুলোকে ‘অযৌক্তিক’ বললেও আওয়ামী লীগ নেতারা চান-বিএনপি নির্বাচনি মাঠে থাকুক। এতে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না। কিন্তু নির্বাচনের আগে মাঠ গরম করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ দেওয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে আগের মতোই কঠোর অবস্থান অব্যাহত রাখবে দলটি। ৯ সেপ্টেম্বর দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সার্বিক দিকনির্দেশনা দেন। শনিবার দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকেও প্রাধান্য পায় আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি। পাশাপাশি আন্দোলনের নামে কেউ বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা চালালে তা কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে বলেও নেতারা মত দেন।
এ বিষয়ে শনিবার এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জনবিচ্ছিন্ন বিএনপি নির্বাচনকে ভয় পায়। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে চোরাগলি পথে ক্ষমতায় আসতে নানা পাঁয়তারা করছে। কিন্তু ক্ষমতায় আসতে হলে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জনগণের ভোটে জয়ী হয়েই আসতে হবে। নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। সংবিধান অনুযায়ী জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের অধীনেই হবে এ নির্বাচন। সংবিধানের বাইরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নিরপেক্ষ সরকার এ রকম কোনো কিছুই গঠিত হবে না।
করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসায় দীর্ঘদিন পর স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নির্বাচনকে সামনে রেখে কেউ যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি চলছে। ফলে অনেক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। এবার মাঠে নামবে, বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরেই তারা বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে তারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। ষড়যন্ত্রের প্রস্তুতি নিচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকার হঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ছাত্রলীগকে সজাগ থাকতে হবে। এ সময় অতীতের কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
দলটির নেতাদের কাছে তথ্য রয়েছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে এখনই দেশি-বিদেশি নানা সংস্থা নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। তরা মনে করেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে এই ষড়যন্ত্র আরও বাড়বে। এর বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের তথ্যপ্রমাণসহ জবাব দিতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদকে এই বিষয়গুলো দেখভালের নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব-অপপ্রচারের জবাব দিতে এক লাখ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টের সমন্বয়ে একটি প্ল্যাটফরম তৈরির কাজ করছে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপকমিটি। এই লক্ষ্যে সারা দেশে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করছে তারা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী তত বেশি গুজব অপপ্রচার ছড়ানোর চেষ্টা করবে। যেহেতু তারা রাজপথে পেরে উঠতে পারবে না, তাই তাদের একমাত্র হাতিয়ার গুজব-অপপ্রচার। আমাদের আগামী দিনে এই গুজব-অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে। তিনি জানান, আমরা সারা দেশে ইতোমধ্যে ৬৯টি কর্মশালা সম্পন্ন করেছি। আমাদের লক্ষ্য জেলা পর্যায়ে ১০ হাজার মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করা। আর এই মাস্টার ট্রেইনারদের দ্বারা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এক লাখ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তৈরি করা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন