বগুড়া সদরের ফাঁপোড় গ্রামে সুদের কারবার বন্ধ ও লেনদেন নিয়ে বিরোধ মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়ায় সুদের কারবারিরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম রকিকে (৩৩) কুপিয়ে হত্যা করেছে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গ্রামের হাটখোলা এলাকায় মীমাংসার বৈঠকে তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ফেলে যায়। বুধবার বিকালে এ খবর পাঠানো পর্যন্ত মামলা হয়নি। পুলিশ কাউকে গ্রেফতারও করতে পারেনি।
সদর থানার ওসি সেলিম রেজা ও স্থানীয়রা এ তথ্য দিয়েছেন। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, নিহত মমিনুল ইসলাম রকি বগুড়া সদর উপজেলার ফাঁপোড় ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়ার মৃত সিরাজুল ইসলামে ছেলে। তিনি ফাঁপোড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি আসন্ন ফাঁপোড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। তার নামে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি এলাকায় বসবাস না করলেও নির্বাচনে প্রার্থিতার কারণে জনসংযোগ ও এলাকার বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন।
ফাঁপোড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট রাজু মণ্ডল জানান, রকি ফাঁপোড় ইউনিয়নে আগামী নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি মাছের ব্যবসা করতেন। ১০ টাকা কেজি দরের চালের ডিলার ছিলেন। দলে ও এলাকার কারো সঙ্গে তার বিরোধ ছিল না।
তিনি জানান, ফাঁপোড় ফকিরপাড়ার আবদুল মজিদ ও গোলাপী বেগমের ছেলে গওসুল আজিম মাদক ব্যবসা এবং সুদের কারবার করে। রকি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার কথা তাই তিনি এলাকায় মাদক ও সুদের কারবার বন্ধের উদ্যোগ নেন। আলতাফ নামে এক প্রতিবেশী গাওসুলের মা গোলাপীর কাছে সুদে কিছু টাকা নেন। টাকা দিতে দেরি হওয়ায় মঙ্গলবার সকালে গাওসুল বাড়িতে গিয়ে আলতাফকে মারধর করে। নালিশ করলে রকি মীমাংসার জন্য এশার নামাজের পর গ্রামের হাটখোলা এলাকায় দু’পক্ষকে ডাকেন।
তিনি আরও জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে সেখানে বসে থেকে অন্যদের সাথে গল্প করার সময় ২০-২২ জন সন্ত্রাসী নিয়ে গাওসুল আজিম সেখানে আসে। রকির সাথে থাকা এলাকাবাসী ভয়ে পালিয়ে যায়। তখন সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে রকির মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে ফেলে চলে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি মারা যান।
সদর থানার ওসি সেলিম রেজা জানান, সুদের টাকা তুলে দেওয়া ও মীমাংসা করার উদ্যোগ নেওয়ায় সন্ত্রাসী গাওসুল আজিমের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতা মমিনুল ইসলাম রকিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মামলা হয়নি; কাউকে গ্রেফতারও করা সম্ভব হয়নি। তবে ঘাতকদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালে বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে রকির লাশ ফাঁপোড় এলাকার বাড়িতে নেওয়া হয়। বিকাল ৪টায় ফাঁপোড় উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মরহুমের প্রথম জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে শহরের বৃন্দাবনপাড়ায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে সেখানে পারিবারিক গোরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু ও সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ নেতা রকি হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতার দাবি করেছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন