কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছ। নতুন কমিটি গঠনের পর সংগঠনের কর্মপন্থা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি আজও। আপাতত নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মাদ্রাসা খোলার বিষয় নিয়েই ভাবছে সংগঠনটি। তবে যে কোনো ভাবেই হোক সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে চান সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। এরই অংশ হিসাবে সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে দেখা করেন হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী।
মন্ত্রীর ধানমণ্ডির বাসার এ বৈঠকে হেফাজতের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী ও সংগঠনের প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফীর একান্ত সহকারী শফিউল আলমও ছিলেন।
দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বৈঠকে সারা দেশে গ্রেফতার হওয়া সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ এবং অতি সত্বর কওমি মাদ্রাসাগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে এসব ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহযোগিতা চান হেফাজতের আমির। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কওমি মাদ্রাসাগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনা এবং মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যাপারে সমন্বিত নীতিমালা তৈরির উদ্যোগের বিষয়েও কথা বলেন।
সূত্র জানিয়েছে, আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত হিসাবে নাম আসায় শুরু থেকেই অস্বস্তিতে ছিলেন বাবুনগরী। ১৫ জুলাই আল্লামা শফী হত্যা মামলার বিষয়ে আদালতের পরবর্তী তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর ঘটনায় আসামির তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার বিষয়ে বাবুনগরীর পক্ষ থেকে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরদিন মঙ্গলবার বেলা ১১টায় হেফাজত আমির ঢাকার খিলগাঁওয়ে মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির বিশিষ্ট মুরুব্বিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম, সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল আওয়াল, প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী, মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সুবহানী ও মাওলানা জহুরুল ইসলাম। পরে এক বিবৃতিতে হেফাজতের আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, ব্যক্তিগত কোনো কারণে নয়, জাতীয় ও দীনি স্বার্থে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সোমবার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আমরা আলেম-উলামাদের নিঃশর্ত মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ এবং অতি সত্বর কওমি মাদ্রাসাগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের দাবি-দাওয়াগুলো মনোযোগ সহকারে শুনেছেন এবং আমাদের সে বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা আশা করছি সরকার দ্রুত আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবেন।
তিনি বলেন, সারা দেশে অসংখ্য নিরীহ আলেম-উলামাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বৈঠকে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিষয়গুলো বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেছি। আমরা জানিয়েছি হেফাজতের বিরুদ্ধে কথিত যে সহিংসতার অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। হেফাজতের কোনো নেতাকর্মী সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত ছিল না। কিছু দুষ্কৃতকারী হেফাজতের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কয়েকটি জায়গায় পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করেছে। তাদের খুঁজে বের করা দরকার।
এর আগে হেফাজতের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী একাধিকবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলেও জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক এটাই প্রথম। হেফাজতের দুজন শীর্ষ নেতা যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দাবিগুলোর বিষয়ে সরকার ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হেফাজত নেতাদের আশ্বাস দিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মাদ্রাসা খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। আর নির্দোষ কাউকে গ্রেফতার করা হবে না। হেফাজতের বিষয়ে সরকারও সুষ্ঠু সমাধান চায়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন