সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদ দখলের অপচেষ্টার প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রতীকী অনশন করেছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা। বুধবার (১৬ জুন) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি (বার অ্যাসোশিয়েশনের) ভবনের সামনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিট আয়োজিত প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে প্রায় তিন শতাধিক আইনজীবী অংশ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদ দখলের প্রতিবাদ জানান।
পরে দুপুর আড়াইটার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন আইনজীবীদের অনশন ভাঙ্গ করান।
এসময় জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে কখনো এমন হয়নি। আমরা কখনো দেখিনি হাত জাগিয়ে কখনো সভাপতি নির্বাচিত হয়। এই অচল অবস্থা নিরসনের জন্য সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে আদালতের ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি হয় না। এটা সর্বোচ্চ বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। এটা একটা সম্মানিত জায়গা। আমাদের সবার বিচারবিভাগের সম্মান রক্ষা করা উচিৎ।’
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আব্দুল জব্বার ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে দুপুর ১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে আরও অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার, বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন, আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল প্রমুখ।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ‘অনির্বাচিত কাউকে সভাপতি মানবে না আইনজীবীরা। এর বিরুদ্ধে আইনজীবীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন সমিতির (বার অ্যাসোসিয়েশন) গত দুই মেয়াদে সভাপতি ছিলেন। তিনি এখন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল)।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিশেষ সাধারণ সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাবেক সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিনকে ফের তৃতীয়বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত করার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা।
গত ৪ মে দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে সিনিয়র সহ-সভাপতি শফিক উল্ল্যার সভাপতিত্বে এ ঘোষণা দেয়া হয়। তবে সভা শুরুর পর এতে সভাপতিত্ব কে করবেন তা নিয়ে হৈচৈ, হট্টগোল ও বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন কার্যনির্বাহী কমিটিভুক্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক পক্ষের আইনজীবীরা। এরপর সেই সভা মূলতবি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টারর রুহুল কুদ্দুস কাজল।
এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে সভাপতি ঘোষণা করে তাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানো অব্যাহত রেখেছেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। কিন্তু এখানে বাধ সেধেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা। তারা সেটি মানতে রাজি নন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করেছেন।
তারা দুইবারের সাবেক সভাপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে সভাপতি হিসেবে মানবেন না। আর আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আমিন উদ্দিনকে সভাপতি ঘোষণার বিষয়টি প্রত্যাহারের দাবিও তুলেছেন বিএনপির জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ এপ্রিল সমিতির গঠনতন্ত্রের ১৬ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে সভাপতির শূন্যপদ পূরণের করণীয় নির্ধারণ করতে সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এই বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করেন। এ সভায় একতরফা ঘোষিত মৌখিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃতীয়বারের মতো সভাপতি করা হয় অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে।
তারও আগে গত ১০-১১ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু। করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন গত ১৪ এপ্রিল মারা যান তিনি। এর ফলে নির্বাচনে সমিতির মোট ১৪টি পদের মধ্যে আটটি পদে জয়ী হয় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সমর্থিত প্যানেল পায় ছয়টি পদ।
গত ৪ মে অনুষ্ঠিত বিশেষ সাধারণ সভা শুরু হলে সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল ঘোষণা দেন যে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি সভা পরিচালনা করবেন। সঙ্গে সঙ্গে সমিতির সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যা মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন, তিনি সভার সভাপতিত্ব করবেন। এর বিরোধিতা করে কাজল বলেন, ‘আপনি সভায় সভাপতিত্ব করতে পারেন না। আরেকজন সিনিয়র সহ-সভাপতি আছেন।’
তখন শফিক উল্ল্যা বলেন, ‘আমিই আজকের সভার সভাপতি।’ এরপর তিনি ঘোষণা করেন, এখন থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নতুন সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন। আওয়ামী সমর্থক আইনজীবীরা করতালির মাধ্যমে তাকে সমর্থন করেন।
অন্যদিকে, বিএনপির আইনজীবীরা ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এক পর্যায়ে সমিতির সম্পাদক কাজল সভা মূলতবি ঘোষণা করেন। এর পরও কিছুক্ষণ মিলনায়তনে দু’পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি ও হট্টগোল চলে। পরে বিকেলে দু’পক্ষই সমিতির প্যাডে আলাদা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়। এরপর থেকে সভাপতির চেয়ারে অনির্বাচিত কাউকে বসার বিরোধিতা করে আন্দোলন করে আসছেন বিএনপি ও জামায়াত সমর্তক আইনজীবীরা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন