আইনের বারান্দায় হাঁটাহাঁটি অনেক দিনের। এটাই ছিল নিয়ম। তারপর রাজনীতির ইতিউতি তো আছেই। আজ সংবাদ সম্মেলন। কাল পদযাত্রা। পরশু বৈঠক। এভাবেই চলছিল রোজকার কড়চা। কিন্তু সব বদলে দিলো একটি ভাইরাস।
কোভিড, কোবিদ বা করোনা। যার ভ্যারিয়েন্ট বদল আরও অস্থির করে তুলেছে সর্বত্র। এই দিনবদলের জন্য কেউই ছিলেন না প্রস্তুত। যেমনটি ছিলেন না সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও বর্ষীয়ান আইনজ্ঞ এবং রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনও। কোভিড যেন সবকিছুকে বদলে দিয়েছে এক নিমিষেই। নিয়ম করে আড্ডা দেয়া, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলা, বক্তৃতার মঞ্চে চলমান ইস্যু নিয়ে সরব থাকেন যিনি, তিনি কেমন আছেন? কীভাবে কাটছে বর্ষীয়ান ও প্রাজ্ঞ এই ব্যক্তিত্বের।
দিনমান ব্যস্ততায় রাশ টেনে ধরলেও নিজ বাসার বাইরে এর মধ্যেই প্রায় প্রতিদিন গেছেন চেম্বারে। করোনায় কেমন কাটছে দিনকাল এ বিষয়ে যখন আলাপ করছিলেন প্রতিবেদকের সঙ্গে তখনও তিনি অফিসমুখী গাড়িতে। সবরকম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যেও সতর্ক দৃষ্টি রেখে চেম্বার করছেন নিয়মিত। তবে এর বাইরে আরও কোনো ধরনের জনসমাগম বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে এই লম্বা সময়ে অংশ নেননি।
করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করে ড. কামাল হোসেন বলেন, সময়টা ভালো যাচ্ছে না। এতটা লম্বা সময় করোনা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে এটা ভাবাই যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতি দেশের জন্যও ভালো না। বিশ্বে এতকিছুর উন্নতি হওয়ার পরও করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
তিনি অবাক বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞাসা রাখেন, বিশ্বজুড়ে নানান রকম চেষ্টা হচ্ছে এই অতিমারি নিয়ন্ত্রণের কিন্তু তারপরও ব্যর্থতা দেখছি? আমাদের এখানেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি করোনা নিয়ন্ত্রণে। সবাইকে ভ্যাকসিন দেয়া যায়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। মানুষ দরিদ্র থেকে আরও দরিদ্র হচ্ছে।
এই দুঃসময়েও সময় করে বাসা থেকে বের হয়ে নিয়মিত মতিঝিলের চেম্বারে যাচ্ছেন। ভার্চ্যুয়ালি আদালতের বিচার কার্যক্রমে চেম্বারের পক্ষ থেকে সহকারীরা অংশ নিচ্ছে। তিনি মামলার নথিপত্র নিয়ে পর্যালোচনা করে বেশ অনেকটা সময় কাজ করেন। তবে তা স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
করোনা শুরুর পর বাসা থেকে চেম্বার ছাড়া আর কোথাও যাননি উল্লেখ করে তিনি বলেন- কি করবো? সর্বত্রই পরিস্থিতি খারাপ। এই সময়ে বেশির ভাগ সময় বাসাতেই পরিবারের সঙ্গে কেটেছে। এমনকি কোনো অতিথি বা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও বসা হয়নি।
বর্তমান প্রাক্কালে রাজনীতির বন্ধ দুয়ার আদৌ কি খুলবে- এমন জিজ্ঞাসায় তিনি বলেন, করোনায় শুদ্ধ রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। ভালো রাজনীতি করার জন্য যে ধরনের পরিবেশ দরকার তা-ও বর্তমানে নেই। সঠিক রাজনীতি করতে হলে সবার আগে পরিবেশ তৈরি করা দরকার।
দলীয় কার্যক্রমে কীভাবে অংশ নিচ্ছেন? প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ তো এই সময়টাই সীমিত। দলের নেতাদের সঙ্গে বেশির ভাগ সময় কথা হয় টেলিফোনে। আর কখনো কখনো জুম আড্ডায়।
করোনায় সামাজিক বা রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকায় এ সময়টা কাজে লাগিয়েছেন বই পড়ে এবং লেখালেখি করে। প্রকাশিত বেশকিছু বইয়ের সংশোধনী এবং নতুন অধ্যায় যুক্ত করার কাজও শেষ করেছেন।
ইউপিএল থেকে প্রকাশিত বই ‘বাংলাদেশ কোয়েস্ট ফর ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস’ বইয়ে নতুন বেশকিছু অধ্যায় যুক্ত করার কাজ ইতিমধ্যেই শেষ করেছেন। এটি আবারো নতুন সংস্করণ আকারে মুদ্রিত হবে বলেও জানিয়েছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন