হেফাজতে ইসলামের সাবেক মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদীর নেতৃত্বে ৮ সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ওই সাক্ষাতে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করা হয়।
মঙ্গলবার রাত ১১টা ৫০ মিনিটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসা থেকে বের হওয়ার পর হেফাজতে ইসলামের নেতারা সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান, ‘তারা লিখিত কিছু দাবি পেশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।’
এর আগে মঙ্গলবার রাত ৯টা ২০ মিনিটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসভবনে প্রবেশ করেন তারা। সার্বিক বিষয় নিয়ে তারা মন্ত্রীর সাথে কথা বলেন।
হেফাজতের দাবিগুলো হলো:
১. হেফাজতের গণআন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে গ্রেফতার হওয়া আলেম ও সাধারণ মানুষকে দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করা।
২. দেশব্যাপী গ্রেফতার অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে। ফলে পবিত্র রমজান মাসে ইবাদত বন্দেগি করতে না পেরে অজানা আতঙ্কে দিন পার করছে মানুষজন। গ্রেফতার আতঙ্ক ও হয়রানি থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া।
৩. ২০১৩ সালে হেফাজতের বিরুদ্ধে যে সব মামলা হয়েছিল, পূর্বের আলোচনা অনুযায়ী মামলাগুলো প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করা।
৪. দ্রুত কওমি মাদ্রাসা খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া।
কওমী মাদ্রাসা খুলে দেয়ার দাবি প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হেফাজত নেতাদের বলেছেন, করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারাশে সারাদেশের স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ মাদ্রাসা বন্ধ করা হয়েছে। তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যখন মনে করবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া সম্ভব কেবল তখনই অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি মাদ্রাসাও খুলে দেয়া হবে।
হেফাজতের গণগ্রেপ্তার বন্ধের দাবি প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, গণগ্রেপ্তার চলছে না। শুধুমাত্র ভিডিও ফুটেজ বা তদন্তকালে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, সন্ত্রাসের সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
হেফাজতের গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের মুক্তির দাবি প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, অপরাধ করেনি এমন কেউ যদি কোনো ভুলের কারণে যদি কেউ গ্রেপ্তার হয়ে থাকে তবে অধিকতর তদন্ত করে বা ভিডিও ফুটেজ পুণরায় পর্যালোচনা করে নিরপরাধ কাউকে পাওয়া গেলে তাদের মুক্তি দেয়া হবে। কারণ সরকার নিরপরাধ কোনো নাগরিককেই শাস্তি দিতে চায় না। শুধুমাত্র প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
২০১৩ সালে মতিঝিলে হেফাজতের আন্দোলনকালে সংগঠিত সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগের অভিযোগে যেসব মামলা হয়েছে সেসব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে হেফাজত।এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সরকার।সব সময়ই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চায়। তবে যাদের বিরুদ্ধে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হবে। তাদের বিষয়ে আদালত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
এছাড়াও তিনি বলেন, কাউকেই হয়রানি করা হচ্ছে না বা নির্দোষ কাউকেই আটক বা গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
যদি হেফাজত নেতৃবৃন্দ গ্রেপ্তার হওয়া কাউকে নিরাপরাধ প্রমাণ করতে পারে বা তাদের কাছে এমন তথ্য প্রমাণ রয়েছে, সেসব আমাদের কাছে উপস্থাপন করলে সরকার বিষয়টি দেখবে বলে বৈঠকে যোগ দেয়া হেফাজত নেতৃবৃন্দকে বলা হয়েছে।
এর আগে ১৯ এপ্রিল রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম, হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক, হেফাজতের নেতা ও খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী ও তার ভাতিজা মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী। পরবর্তীতে হেফাজতের ওই কমিটি বাতিল ঘোষণা করা হয়।আস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন