শেখ হাসিনার গুম-খুনের রাজনীতি-২৪
আট বছর আগে ডিবির পরিচয়ে প্রকাশ্যে তুলে নেয়া হয়েছিলো তেজগাঁও কলেজের ছাত্রদল নেতা তরিকুল ইসলাম ঝন্টুকে। এখনও সেই স্মৃতি টাটকা হয়ে আছে স্বজনদের। ছেলে হারানোর দগদগে ক্ষত এখনও বহন করছেন মমতাময়ী মা।
আওয়ামী লীগের দু:শাসনে একের পর এক এমন গুমের কারণে অনেক স্মৃতিই হয়তো সাধারণ মানুষের মন থেকে মুছে যেতে শুরু করেছে। কিন্তু, মায়ের মন থেকে কি সন্তানের স্মৃতি কখনও ঝাঁপসা হয়!
এখনও ছেলের পথ চেয়ে থাকেন ঝন্টুর মমতাময়ী মা হাসিনা বেগম।
পাঠক, ঝন্টুর মায়ের নামটা পড়ে নিশ্চয়ই একটু থমকে গেছেন! না, থমকে যাওয়ার কিছুই নেই। নামটা ঠিকই পড়ছেন।
২০১৫ সালের ৫ই জানুয়ারি মধ্যরাতের প্রহসনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেভাগে সারা দেশ থেকে প্রতিশ্রুতিশীল অনেক ছাত্রদল নেতাকে গুম করেছিলো আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট র্যাব, ডিবি ও পুলিশ। অনেককে তথাকথিত ক্রসফায়ারের নাম হত্যাও করা হয়েছিলো।
তেমনই এক ঘটনায় হাসিনা বেগমের বুক খালি করে তার আদরের পুত্রকে গুম করে শেখ হাসিনার উচ্ছিষ্ট্যভোগী ডিবির লোকেরা।
নিজ পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় নিরাপদে রেখে, গত এক যুগে বাংলাদেশে অনেক মায়ের বুক খালি করেছেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা।
“শেখ হাসিনার গুম-খুনের রাজনীতি” শীর্ষক লেখায় আজকে তুলে ধরা হয়েছে তেজগাঁও কলেজের ছাত্রদল নেতা তরিকুল ইসলাম ঝন্টুর গুম হওয়ার কথা। ছেলের পথ চেয়ে এখনও অপেক্ষায় আছেন হতভাগ্য মা হাসিনা বেগম।
ছেলের স্মৃতিটা এখনও আগের মতোই আছে। এখনও আদরের ছেলের জন্য পথ চেয়ে থাকেন মমতাময়ী এই মা। কত জায়গায় গিয়েছেন, কত দরজায় ধর্না দিয়েছেন। কিন্তু, আজও ছেলেকে ফেরত দেয়নি ওরা।
হাসিনা বেগম বলেন, ২০১৩ সালের ৬ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে দক্ষিণখান মধ্য মোল্লারটেক থেকে সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ঝন্টুকে তুলে নিয়ে যায় সশস্ত্র ব্যক্তিরা।
এ সময় তরিকুল ইসলাম ঝন্টুর সঙ্গে ছিলেন ছা্ত্রদল বিমানবন্দর থানার নেতা নিজাম উদ্দিন মুন্না।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন নিজাম উদ্দিন মুন্নার বাবা মো. শামসুদ্দিন। স্থানীয় লোকেরাও পুরো ঘটনা দেখেছিলো। কিন্তু, ডিবি পরিচয় দেয়ার পর কেউ আর এগিয়ে আসেনি দুই তরুণকে বাঁচাতে।
বরাবরের মতোই ডিবি পুলিশ, দক্ষিণখান ও বিমানবন্দর থানা পুলিশ পরে তরিকুল ইসলাম ঝন্টুকে গুম করার কথা অস্বীকার করে।
ছেলেকে ফেরত পেতে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন ঝন্টুর মা।
সেই সংবাদ সম্মেলনে অশ্রুসিক্ত চোখে হাসিনা বেগম বলেছিলেন, “ছাত্রদল করাই কি আমার ছেলের অপরাধ! আমার ছেলে কোনো অপরাধ করলে আদালতে হাজির করে তার বিচার করা হোক, শাস্তি হোক। কিন্তু এভাবে গুম করা মা হিসেবে এটা সহ্য করতে পারছি না।”
তিনি বলেন, “আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু, সেখানে কোনো খোঁজ পাইনি। শুধু রাজনীতির কারণে ঝন্টুকে গুম করা হয়েছে।”
মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম ঝন্টু ছিলেন তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক। চার ভাইয়ের মধ্যে ঝন্টু ছিলেন মেজো। বাবা মোহাম্মদ নুর খান চাকরিজীবি।
তরিকুল ইসলাম ঝন্টুর ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম মিথুনের অভিযোগ, “ছাত্রদল করাই ছিলো আমার ভাইয়ের অপরাধ। এজন্যই তাকে গুম করা হয়েছে।”
বিএনপির দাবি, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী আমলে ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার মানুষকে তথাকথিত ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করেছে পুলিশ, র্যাব, ও ডিবি। এদের অধিকাংশই বিরোধী দলের নেতা-কর্মী। এছাড়া তিন হাজারেরও বেশি বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীকে সারা দেশে গুম করা হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য, ভিন্নমতকে দমন করার জন্য এই ধরনের গুম-খুন-অত্যাচার-নিপীড়ন-নির্যাতন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল এ্যাক্ট ১৯৭৩ ধারা-২(২)(ক) অধীনে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন