স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্সাগে হেফাজত নেতাদের বৈঠক নিয়ে সারাদিন নানান আলোচনা ও সমালোচনার যেন কমতি নেই। অনেকেই বলেছেন এটা কেমন কথা দিনে গ্রেফতার আর রাতে বৈঠক। তাহলে আইন তো স্বাভাবিক গতি পাবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজনৈতিক নেতা বলেছেন আসলে হেফাজত নিজেদেরই হেফাজত করতে পারছে না। তারা আবার ইসলাম হেফাজত করবে কি ভাবে? তিনি বলেন, এটা একটা এজেন্ডা ভিত্তিক দল। এরাও জানেনা তাদের গন্তব্য কোথায়। একদিকে স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করে মধ্য রাতে অন্যদিকে তাদের আমীর জনগণের উদ্দ্যশ্যে ভাষণ দেয়। ওই ভাষনেও তাদের দলের কর্মসূচীর ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন ধারণা নেই। একেবারে লেজেগোবরের অবস্থা।
গভীর রাতের বৈঠক নিয়ে বিভিন্ন দলে ও বিভিন্ন মহলে নানান আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। সকলের মুখে একই দাবী একই রব। হেফাজত তাদের সব কিছুই জলাঞ্জলী দিয়েছে। এরা একটা সুবিধাবাদী দল। এদের ঠিক ঠিকানা নেই।
প্রসঙ্গত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা। সোমবার রাত ১০টার দিকে হেফাজতের ১২ শীর্ষ নেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় ঢোকেন। রাত ১২টার দিকে তারা বেরিয়ে আসেন। তবে বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কী-না সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসা থেকে বেরিয়ে হেফাজত নেতারা নিজেরা কিছুক্ষণ কথা বলেন। বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে হেফাজতের মহাসচিব নূরুল ইসলাম জিহাদি জানান, তিনি অসুস্থ। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বৈঠক কি ফলপ্রসূ- এই প্রশ্নের উত্তরে গ্রেপ্তার হওয়া হেফাজত নেতা মামুনুল হকের ভাই মাহফুজুল হক বলেন, ‘আলোচনা হয়েছে, তবে আর কিছু বলার নেই।’ সেই রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসার সামনে উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিক হেফাজত নেতাদের কাছে কিছু বলার অনুরোধ জানালেও তারা দ্রুত গাড়িতে উঠে চলে যান। এ সময় আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর কাছে বৈঠক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি হাত নাড়িয়ে বক্তব্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানান।
সংশ্লিস্টরা আরো জানান, হেফাজতের শীর্ষ নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় যখন ঢোকেন তখন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। হেফাজতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তাদের ১২ জন নেতা অংশ নেন। বৈঠক চলে রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত। তিনি বলেন, ‘আমরা গ্রেপ্তার বন্ধের দাবি করেছি। সরকার আমাদের ভুল বুঝেছে- সেটা বলার চেষ্টা করেছি।
এদিকে হেফাজত নেতারা জানান, গত ২৬ মার্চ হেফাজতের কোনো কর্মসূচি ছিল না। কারা সেদিন মিছিল ও ভাংচুর করেছে সেটা তদন্তের দাবি করেছি।’ বৈঠক ফলপ্রসু হয়েছে কি-না জানতে চাইলে জাকারিয়া নোমান বলেন, 'এটা পরে জানানো হবে।' বৈঠকে অংশ নেওয়া হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ছিলেন সংগঠনের নায়েবে আমীর আতাউল্লাহ হাফেজী, হেফাজতের মহাসচিব নূরুল ইসলাম জেহাদী, মামুনুল হকের ভাই বেফাকের মহাসচিব মাহফুজুল হক, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, হাবিবুল্লাহ সিরাজী প্রমুখ।
সংশ্লিস্ট সূত্র আরো জানায়, এর আগে সোমবার একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে হেফাজতের পাঁচ শীর্ষ নেতা বৈঠক করেন বলে জানা গেছে। হেফাজতের একজন নেতা জানান, সেই বৈঠকের ধারাবাহিকতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় সোমবার রাতের বৈঠকটি হয়।
সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কোণঠাসা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা সমঝোতার চেষ্টা করছেন। তারই অংশ হিসেবে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলেন। হেফাজতের নেতারা চাইছেন, তাদের আর কোনো নেতাকর্মীকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু বলেন, ‘প্রায় দিনই হেফাজতের কেউ না কেউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। আজকেও বেশ কয়েকজন নেতা এসেছেন। তারা মন্ত্রীর কাছে সময় চেয়ে বসেছিলেন অনেক্ষণ। এরপর মন্ত্রী সময় দিয়েছেন। তাদের কথাবার্তা শুনছেন মন্ত্রী।’ কি সিদ্ধান্ত হয়েছে তা জানা যায়নি।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন