রাজধানী ঢাকার সোবহানবাগ জামে মসজিদ পুনর্নির্মাণ করা হবে। ৮৪ বছরের পুরনো এই মসজিদের মূল অংশ ১০ তলায় সম্প্রসারণ করা হবে। প্রায় অর্ধশত কোটি টাকায় মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করবে গণপূর্ত অধিদফতর। বর্তমান মসজিদটিতে ছয় থেকে সাতশ’ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। ১০ তলা মসজিদটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে অন্তত চার হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
যার নামে এই সোবহানবাগ, সেই মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুস সোবহানসহ তার পারিবারিক কবরস্থানটি অক্ষুণ্ণ রেখে কিছু অংশ মসজিদের নতুন ভবনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। নতুন মসজিদের কাজ শেষ হলে মসজিদের সামনে মিরপুর সড়কটিও প্রশস্ত হবে প্রায় ২৬ ফিট। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটির কাজ শেষ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও তাগাদা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। মসজিদের কার্যক্রম চালু রাখতে পাশের ধানমণ্ডি ১৪ নম্বর সড়কের ওপর স্টিল স্ট্রাকচার দিয়ে একটি অস্থায়ী মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। পরে মূল মসজিদটির কাজ শেষ হলে সেটি আবার সরিয়ে ফেলা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৩৭ সালে ৩৫ শতাংশ জমির ওপর সোবহানবাগ মসজিদ ও পাশে পারিবারিক কবরস্থানটি প্রতিষ্ঠা করেন মাওলানা মোহাম্মদ আবদুস সোবহান। কবরস্থানের নামফলকের তথ্য অনুযায়ী মসজিদ ও কবরস্থান প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর ১৯৪০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মারা যান তিনি। মাঝে একাধিকবার সংস্কার হলেও মসজিদটি সরানোর প্রয়োজন পড়েনি। মসজিদটি ১৯৯২ সালে পাঁচতলা ভিত্তির ওপর পুনর্নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে মসজিদের দুদিকের রাস্তা সম্প্রসারিত থাকলেও মসজিদের সামনের রাস্তাটি খুবই সংকীর্ণ। নতুন করে মসজিদটি নির্মাণের পর সামনে রাস্তার পাশে থাকা দোকান ঘরগুলো আর থাকবে না। এদিক দিয়ে ২৬ ফিট রাস্তা সম্প্রসারিত হয়ে রাস্তাটিও সোজা হয়ে যাবে।
৮৪ বছরের পুরনো সোবহানবাগ মসজিদটির আধুনিকায়ন ও ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের জন্য কয়েকবছর আগেই সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য গণপূর্ত অধিদফতরের একটি প্রকল্প হিসেবে মসজিদটি নির্মাণের কাজ হাতে নেয় তারা। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত তিন অর্থবছর মেয়াদে এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৪৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। স্থপতি ইকবাল হাবিব সোবহানবাগ মসজিদের এ ১০ তলা স্থাপনাটির নকশা প্রণয়ন করেন। বর্তমান মসজিদটিতে ছয় থেকে সাতশ’ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারলেও ১০ তলা মসজিদটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে অন্তত চার হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থপতি ইকবাল হাবিব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে গত মাসে মিটিং হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, পাশে অস্থায়ী মসজিদ নির্মাণ শেষ করে সেখানে সেপ্টেম্বরের মধ্যে নামাজ শুরু করতে হবে। এরপর থেকে পুরনো মসজিদ ভাঙ্গা শুরু হবে। আগামী নভেম্বর (২০২১) থেকে মসজিদের নতুন ভবনের কাজ শুরু হবে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করে অস্থায়ী মসজিদটি আবার ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা আছে। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য একই সঙ্গে দুটি করে ফ্লোর ঢালাই দিতে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত কারিগরি সহযোগিতা যা লাগবে সেটা দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইকবাল হাবিব আরও বলেন, মসজিদটি ১০ তলা হবে। প্রতি ফ্লোরে মুসল্লি নামাজ পড়তে পারবে সাড়ে তিনশ’ থেকে চারশ’ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, মসজিদটি ২৬ ফুট সরে যাচ্ছে পশ্চিমে। এতে সড়ক সম্প্রসারিত হচ্ছে ২৬ ফুট। সামনের স্থাপনা আর থাকবে না। জন্য কবরস্থানের কিছু অংশ থাকবে না। তবে মাওলানা মোহাম্মদ আবদুস সোবহানসহ তার পরিবারের সদস্যদের কবর অক্ষুণ্ণ রেখেই নতুন করে এই স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে।
সোবহানবাগ মসজিদটি আরও একটি কারণে ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সামরিক সচিব কর্নেল জামিল উদ্দীনকে শেষবারের মতো ফোন দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু কর্নেল জামিলকে ফোনে জানিয়েছিলেন, তাকে আক্রমণ করা হয়েছে, ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছে। এসময়ে লাইন কেটে গেলে আর কথা বলতে পারেননি তারা। তিনি বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার জন্য প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টকে (পিজিআর) নির্দেশ দিয়ে ৩২ নম্বর রোডের বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে ছুটে যান। পথিমধ্যে এই সোবহানবাগ মসজিদের কাছে পৌঁছালে পিজিআর কনভয় কর্নেল জামিলকে বাধা দেয়। তিনি তাদের কাছে এর কারণ জানতে চান। তখন তাকে বলা হয়, সামনে সেনা ইউনিট রয়েছে এবং গোলাগুলি চলছে। তখন তিনি নিজেই গাড়ি চালিয়ে ৩২ নম্বর রোডে যাওয়ার চেষ্টা করলে মসজিদের সামনে গাড়ির মধ্যেই গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়।
গণপূর্ত অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সোবহানবাগ মসজিদটিতে অত্যাধুনিক সুবিধা থাকবে। ভূগর্ভস্থ জলাধার, বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন, ১৫০ কেভি জেনারেটর, দুই হাজার কেজি প্যাসেঞ্জার লিফট, পাম্প মোটর সেট, সাউন্ড সিস্টেম, অনগ্রিন সোলার সিস্টেম, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, এয়ারকুলারের ব্যবস্থাসহ ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন