নিপু বড়ুয়া
২০০০ সালের কথা। বেইলি রোড, মগবাজার টু এলিফ্যান্ট রোডে অনেক নামিদামি অডিও রেকর্ডিং স্টুডিও ছিল। প্রতি সপ্তাহে নতুন গানের খোঁজখবর নিতাম। সন্ধ্যা হলেই স্টুডিওগুলোতে সংগীত তারকাদের মিলনমেলায় পরিণত হতো। গান নিয়ে আড্ডা জমতো। ঠিক একদশক পর শিল্পীরা ঘরে ঘরে স্টুডিও বানিয়ে ফেলেন! ফিতা ক্যাসেটের যুগ থেকে ইউটিউবে চলে এসেছি। অডিও গানের সেই আবেদন অনেকটা হারিয়ে গেছে! এখন আর রাস্তায় কিংবা গাড়িতে উচ্চস্বরে গান বাজতে শুনি না। শুধু তাই নয়, উৎসবেও গানের আওয়াজ পাই না। এখন সবাই মিলিয়ন বিলিয়ন ভিউ নিয়ে ব্যস্ত! অডিও ইন্ডাস্ট্রি আছে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ গত কয়েক বছর ধরে দেখছি অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো ধুমছে নাটক বানাচ্ছেন। অডিও ইন্ডাস্ট্রি নাটকে ঢুকে গেছে। শিল্পীরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নিজেদের ইউটিউব চ্যানেলে মনোযোগী হয়েছেন। এটা ভালো হয়েছে। রয়ালিটির চক্কর থেকে শিল্পীরা রেহাই পাবে। কিন্ত একটা ইন্ডাস্ট্রি চোখের পলকে নাই!
অডিও গানের মতোই ২০১০ সালের পর সিনেমায় ৩৫ মি মি থেকে রেড ক্যামেরাসহ কতকিছুর প্রচলন শুরু হয়। কয়েকজন তারকা সে সময় বলেছিলেন প্লাস্টিক ক্যামেরায় শুটিং করবো না। অথচ তারাই এখন প্লাস্টিক ক্যামেরার সঙ্গে বসবাস করছেন। সিনেমার বাজার একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই শিল্পী প্রযোজকদের অভ্যন্তরীন কোন্দলে সিনেমা না থাকলেও পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে তারা খবরের শিরোনামে থাকতেন। ততদিনে সিনেমা প্রযোজনা কমতে শুরু করে। আমি সিনেমায় অনেক অতিথি প্রযোজক দেখেছি। উনারা একসঙ্গে ১০/২০ ছবির ঘোষণা দিয়ে কয়েকটি ছবি বানিয়ে দম হারিয়ে ফেলেন। ফলাফল বছরের পর বছর সিনেমাগুলো বাক্সবন্দি হয়ে থাকত। ফলাফল, প্রযোজক ব্যাক টু প্যাভিলিওন।
করোনার মহামারিতে সিনেমার ব্যাবসা একেবারেই শেষ! গত দেড় বছরে কিছু সিনেমা নির্মিত হয়েছে। কিন্ত ছবি রিলিজ দেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিলনা। বিকল্প পথ হিসেবে অনলাইন প্লাটফর্মকে বেছে নিয়েছেন নির্মাতা ও প্রযোজক। অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে সিনেমার ব্যবসা কতহলো সেটা জানা সম্ভব হয়নি। যাই হোক দেশে এখন অনেক অনলাইন স্ট্রিমিং অ্যাপ যাত্রা শুরু করেছে। আজ খবর পেলাম আরও একটি প্রযোজনা সংস্থা অনলাইন প্লাটফর্ম আনছেন। বেশ ভালো খবর। আগামী এক বছরের মধ্যে আরও কয়েকজন প্রযোজক অ্যাপ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিবেন। না করে তো উপায় নেই! কারন তাদের বস্তাপচা গল্পের সিনেমা গাঁটের পয়সা খরচ করে কে দেখবে? নিজেরাই নিজেদের সিনেমা দেখবেন। ওটার জন্য তো একটা অ্যাপস লাগবে।
অনলাইন স্ট্রিমিংয়ে স্টার, সুপারস্টার বলে কিছু নাই এটা পাশের দেশ বুঝলেও আমরা এখনও বুঝতে পারি নাই!
আমাদের কয়েকজন তারকার মিলিয়ন মিলিয়ন ফলোয়ারস। একদিন হয়তো শুনবো তারকারা তাদের ভক্তদের টার্গেট করে অ্যাপস বানাবেন। সেখানে নিজেই প্রডিউস করে সিনেমা রিলিজ দিবেন। কারন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হবে তো।
সিনেমাকে বাক্সবন্দি করে প্রযোজকরা ঘরে ঘরে অলনাইন স্ট্রিমিং অ্যাপস বানিয়ে তবেই ক্ষান্ত হবেন!
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন