কোন পণ্যের সঙ্কট তৈরি হতে পারে বা দাম বাড়তে পারে বিশ্ববাজারে, এমন আভাস পেলেই বাংলাদেশে লাফ দিয়ে দাম বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা তখন বাড়তি মজুদ করেন এ পণ্য। এতে বাজারে তখন কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা হয়। আর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে, সেই বাড়তি দাম কখনো কমে না। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের নীতি। যেমন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার আশঙ্কায় দেশে দাম বেড়েছিল লাফিয়ে। বাজারে ভোজ্যতেলের সঙ্কট তৈরি হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারীতে। এখন আর্ন্তজাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে। কিন্তু সেদিকে কারো নজর নেওয়ার ই। দাম রয়ে গেছে আগের জায়গায়।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে মিল রেখে দেশে ভোজ্যতেলের দ্রুত দাম সমন্বয়ের দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
শনিবার (১৬ জুলাই) এক বিবৃতিতে এ দাবি জানিয়েছে ক্যাব।
বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, দেশে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন দাম বাড়াতে যতটুকু আগ্রহী, বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশে কমাতে তেমন আগ্রহী নয়। এতে ভোজ্যতেলের বাজারে বিরাজ করছে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশিয় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দেন আমদানিকারকরা। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দীর্ঘদিনেও দেশীয় বাজারে পণ্যটির দাম সমন্বয় হয় না। আবার আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় বাজারে দাম বাড়ে, কিন্তু দাম কমলে ব্যবসায়ীরা উল্টো সুর দেন। বেশি দামে কেনা বা বুকিং রেট বেশিসহ নানা অজুহাত দেখান। আর্ন্তজাতিক বাজারে ক্রমাগতভাবে দাম কমার পরও দেশে ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয়ের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী একাধিক বার আশ্বাস দিলেও সে আশ্বাসের বাস্তবায়ন হয়নি।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, যখন বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়তি ছিল, তখন পণ্যটি আমদানিতে সরকারের পক্ষ থেকে ভ্যাট ছাড়, এলসি কমিশন ও এলসি মার্জিন প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর ওই সুবিধা নিয়ে আমদানিকারকরা তেল দেশের বাজারে আনলে দাম কমার কথা ছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার বিপরীত ঘটেছে এবং ভোক্তারা তার কোন সুফল পায়নি। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছে, দেশে তার বিপরীতে বাড়ানো হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের উল্টো সুর হলো- ভোজ্যতেলের এফওবি দাম কমলেও বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দেশে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়া এবং ডলারের উচ্চমূল্যসহ নানা ভৌতিক কারণে দাম আগের অবস্থানে ফিরছে না। এটি ব্যবসায় সুশাসন, ব্যবসায়িক নীতি নৈতিকতাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে।
বিবৃতিতে ক্যাব সহ-সভাপতি আরও বলেন, দাম বৃদ্ধির পর্যালোচনা করে দেখা যায়-গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ভোজ্যতেলের দাম পাঁচবার উঠানামা করেছে। এর মধ্যে তিন দফায় দাম বাড়ানো হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারসাজিতে অক্টোবরের শেষ দিক থেকে বেসামাল হয় ভোজ্যতেলের বাজার। ফলে অক্টোবরে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন ১৬০ টাকা বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে প্রতি লিটার ২১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। পরে সরকারের পক্ষ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সে সময় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৬৮ নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
ক্যাবের বিবৃতিতে বলা হয়, গত রমজানের ঈদের পর গত ৫ মে দেশে ভোজ্যতেলের দাম সরকার পুর্নর্নিধারণ করে। ওই সময়ে সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি রেকর্ড পরিমান বাড়িয়ে ৩৮ টাকা বাড়ানো হয়। এরপর গত ৯ জুন কোনো কারণ ছাড়াই মিল পর্যায়ে ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম মিলগেটে ১৮০ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৮২ টাকা ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম মিলগেটে ১৯৫ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৯৯ ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এক লিটারের খোলা পাম অয়েলের (সুপার) দাম মিলগেটে ১৫৩ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৫৫ ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৫৮ টাকা করা হয়। এক্ষেত্রে সয়াবিনের দাম বাড়ানো হয়েছে লিটারপ্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা। আর্ন্তজাতিক বাজারে তিন মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ২০০ থেকে ৪৯০ ডলার কমলেও দেশে তার বিপরীতে ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে এক মাসে দু'দফায় প্রতি লিটার সয়াবিনে দাম বাড়িয়েছেন ৫১ টাকা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন