কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা সংক্ষেপে “এআই” টুলস দিয়ে তৈরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু ভুয়া ছবি গত সপ্তাহে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে দেখা গিয়েছে। ওই ছবিতে সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার অবস্থায় দেখা যায়।
পুরোপুরি ভুয়া ওই ছবিটি দিয়ে বোঝানো হয়েছে যে মি. ট্রাম্প হয়তো এক নারীর মুখ বন্ধ রাখার জন্য তাকে ঘুষ দেয়ার চেষ্টা করেছেন, যার সাথে তার পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল।
অথচ মি. ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এখনও এমন কোন অপরাধের অভিযোগ আনা হয়নি।
যারা ওই ছবিটি শেয়ার করছেন তাদের মধ্যে অনেকেই অবশ্য বুঝতে পেরেছেন যে ছবিটি জাল, এবং তারা ওই ছবিটি দিয়ে আরও মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেননি। কিন্তু এমনও অনেকে আছেন যারা এই ছবিটিকে আসল মনে করে বোকা বনেছেন।
বৃহস্পতিবার, মি. ট্রাম্প তার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ একটি এআই-জেনারেটেড ছবি শেয়ার করেছিলেন। সেখানে তাকে প্রার্থনায় নতজানু অবস্থায় দেখা যায়।
এআই-জেনারেটেড এসব ছবির অত্যাবশ্যক চিহ্নগুলো কী? এবং কিভাবে আপনি একটি আসল ছবি থেকে একটি নকল ছবি আলাদা করতে পারবেন?
ছবিটি কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয় দেখলেই এর বিভ্রান্তিগুলো ধরা দেবে।
কিছু কি সন্দেহজনক মনে হচ্ছে?
উপরের এই ছবিটির মতো অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এমন অনেক ছবি দেখতে হাইপার-রিয়েল বা অতিবাস্তব - অর্থাৎ ছবিটিকে কোন আকস্মিক মুহূর্তে তোলা ফটোগ্রাফি মনে হবে না। বরং মনে হবে সাজানো শৈল্পিক শটের মতো খুব পরিকল্পনা করে ছবিটি তোলা হয়েছে৷
এবং আরও মনোযোগ দিয়ে দেখলে কিছু সুস্পষ্ট কিছু বিষয় ধরা দেবে। যা দেখে আন্দাজ করা যাবে যে ছবিতে কিছু ঝামেলা আছে।
ছবিটির মাঝামাঝি অংশে তাকান। মি. ট্রাম্পের হাতটি খুব ছোট, এবং বাম দিকের পুলিশ কর্মকর্তা এমনভাবে সেই হাত ধরছেন যা দেখে মনে হচ্ছে যেন নখরযুক্ত প্রাণী কিছু ধরার চেষ্টা করছে।
একইভাবে, আপনি যদি মি. ট্রাম্পের ঘাড়ের অংশে লক্ষ্য করেন, আপনি লক্ষ্য করবেন যে তার মাথাটি যেন এটি ছবির ওপর কেটে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এআই বিশেষজ্ঞ এবং বিবিসি রেডিও সিরিজ 'দ্য ফিউচার উইল বি সিন্থেসাইজডের' উপস্থাপক হেনরি আজডার বলেছেন, বর্তমান প্রযুক্তি শরীরের কিছু নির্দিষ্ট অংশ বিশেষ করে হাতের অংশটি খুব নিখুঁতভাবে চিত্রিত করতে সক্ষম নয়।
"আপনি যদি ছবিগুলো বড় করে বা জুম করে দেখেন তাহলে আপনি প্রায়শই আঙ্গুলের সংখ্যায় অসঙ্গতি পাবেন," তিনি বলেছেন।
অন্যরা কী বলছে?
যদি মি. ট্রাম্প কোন অভিযোগে অভিযুক্ত হন বা যখন অভিযুক্ত হবেন, তখন তার গ্রেপ্তারের খবর সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হবে।
সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট যদি পুলিশের হাত থেকে কোনোভাবে পালিয়ে যেতেন তাহলে গণমাধ্যমে এ নিয়ে কেমন তোলপাড় হবে আপনি নিশ্চয়ই ধারণা করতে পারছেন।
কয়েকটি নিউজ সাইট যাচাই করলে সহজেই নিশ্চিত হতে পারবেন যে মি. ট্রাম্পকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, এমনকি অভিযুক্তও করা হয়নি - অন্তত এখনও নয়।
সেইসাথে এই ছবিটি কোন কারণের ওপর ভিত্তি করে শেয়ার করা হয়েছে, সেটা নিয়েও চিন্তা করা যেতে পারে। কে বা কারা শেয়ার করেছে- এবং তাদের উদ্দেশ্য কি?
মি. আজদার বলেন, মানুষ প্রায়শই তাদের রাজনৈতিক প্রচার প্রসারে নানা ধরণের ছবি শেয়ার করে থাকে। অনেক সময় তারা যাচাই করে না, যে ছবিটা তারা শেয়ার করছে সেটা আসল নাকি নকল।
তিনি বলেন, "আমাদের কাছে মিথ্যার মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানোর এমন অনেক বিরূপ উদাহরণ রয়েছে। যেমন ন্যান্সি পেলোসির ভয়েস রেকর্ডিংয়ের গতি কমিয়ে দেয়া হয়েছে যেন তার কথা শুনতে মাতালের মতো লাগে।”
“এটি ছিল মিথ্যা রটানোর একটা বড় উদাহরণ এবং এটি বিশ্বাস করে অনেকেই বোকা বনেছেন আবার অনেকে বিশ্বাস করতে চেয়েছেন। "
মাঝামাঝি-ডানদিকে ঝাপসা মুখের একজন ব্যক্তিকে দেখেই এই ছবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
অদ্ভুত বিবরণ
ছবিগুলো আরও কাছে থেকে মনোযোগ দিয়ে দেখলে আরও কিছু সন্দেহজনক বিবরণ প্রকাশ পেতে পারে।
অপ্রাকৃত ত্বকের গঠন এবং চামড়ার রং দেখে মনে হবে যেন মোমের পুতুল, মুখের চামড়ার দাগ ছোপ ঝাপসা করে মসৃণ করে ফেলা হয়েছে। এসব বৈশিষ্ট্য শক্তিশালী ইঙ্গিত দেয় যে ছবিটি জাল।
উপরের ছবির মাঝামাঝি-ডানদিকে ঝাপসা মুখের একজন ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে। এবং মি. ট্রাম্পের চুল ঝাপসা দেখাচ্ছে, যেখানে কিনা তার মুখ একদম স্পষ্ট।
এআই প্রযুক্তি এখনও মানুষের চোখ নিখুঁতভাবে চিত্রায়ন আয়ত্ত করতে পারেনি।
উপরের ছবিতে, পুলিশ কর্মকর্তারা মিঃ ট্রাম্পকে তাড়া করছেন বলে মনে হচ্ছে - কিন্তু তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন দিকে তাকাচ্ছেন। এবং পেছনের মানুষেরা তাকে "ধাওয়া করা" সত্ত্বেও বেশিরভাগই ফোকাসে আছে বা তাদের মুখাবয়ব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
ছবিটি কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে দেখলেই এর বিভ্রান্তিগুলো ধরা দেবে।
আরও যে সমস্যা
এআই বিশেষজ্ঞরা বিবিসিকে বলেছেন যে নকল ছবি বিষয়টি "নতুন কিছু নয়" তবে এটি যতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে ততো বেশি অপব্যবহারের আশঙ্কা তৈরি হবে।
"সিনথেটিক কনটেন্ট যতো দ্রুত গতিতে বিকশিত হচ্ছে সেইসাথে আসল ও নকল বিষয়বস্তুর মধ্যে পার্থক্য করাটাও কঠিন হয়ে উঠছে," বলেছেন ডিজিটাল কনটেন্ট অ্যানালাইসিস কোম্পানি ট্রুপিক-এর মুনির ইব্রাহিম৷
বিশেষজ্ঞরা একমত যে মিঃ ট্রাম্পের খ্যাতিমান ব্যক্তি হওয়ায় তার ছবির নকলগুলো সহজে চিহ্নিত করা গিয়েছে। কিন্তু যারা এতো বেশি পরিচিত নন তাদের ছবির সত্যতা যাচাই করার কাজটি আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে – কেননা প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন