হিন্দু দেবদেবীদের ছবি ছাপা ছিল এমন খবরের কাগজে মুড়ে মাংস বিক্রি করার অভিযোগে ভারতের উত্তরপ্রদেশে পুলিশ একজন মুসলিম রেস্তোরাঁ মালিককে গ্রেপ্তার করেছে।
সম্ভলের বাসিন্দা মহম্মদ তালেবের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো ও হত্যা প্রচেষ্টারও অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগ আহত করার অভিযোগে মহম্মদ তালেবের দোকানের সামনে বিক্ষোভ শুরু হলে তারা পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করে।
রাজ্যের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিন্দু জাগরণ মঞ্চই ওই বিক্ষোভ ও জমায়েতের আয়োজন করেছিল বলে জানা যাচ্ছে।
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত
উত্তরপ্রদেশের সম্ভল শহরের প্রধান বাজার এলাকায় মহম্মদ তালেবের 'মেহেক' নামে রেস্তোঁরাটি বেশ কয়েক বছরের পুরনো। অনেকেই সেখান থেকে মাটন কাবাব, চিকেন তন্দুরির মতো বিভিন্ন পদ টেকঅ্যাওয়ে বা পার্সেল করিয়ে নিয়ে যান।
গত ১লা জুলাই থেকে ভারতে সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক বা পলিথিনের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে দোকানিরাও বাধ্য হয়ে কাগজের ব্যাগ বা খবরের কাগজের ঠোঙাতেই ক্রেতাদের জিনিসপত্র দিতে শুরু করেছেন।
This incident took place in Sambhal, Uttar Pradesh
UP Police arrested a Muslim restaurant owner named Talib just because he inadvertently wrapped non-veg food in a newspaper carrying Hindu Gods and Goddesses.
Video credits: @AshrafFem pic.twitter.com/tE2s9tIlzC
— HindutvaWatch (@HindutvaWatchIn) July 4, 2022
মহম্মদ তালেবের দোকানেও ব্যবহার করা হচ্ছিল সেরকমই পুরনো খবরের কাগজ, আর হিন্দুদের নবরাত্রি উৎসবের সময় প্রকাশিত সেই কাগজগুলোতে ছিল নানা হিন্দু দেবদেবীদের ছবি।
সেই কাগজে মুড়ে মাংসের পদ বিক্রি করা হচ্ছে- এটা খেয়াল করে রবিবার স্থানীয় হিন্দু জাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীরা 'মেহেক' রেস্তোরাঁর সামনে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। মঞ্চের জেলা সভাপতি কৈলাস গুপ্তার সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন মহম্মদ তালেব ও তার দোকানের কর্মীরা।
রাজ্য পুলিশের বক্তব্য
সম্ভলের পুলিশ সুপার চক্রেশ মিশ্রা মঙ্গলবার টুইটারে বিবৃতি দিয়ে জানান, তালেব নামে এক ব্যক্তি তার আমিষ রেস্তোরাঁয় হিন্দু দেব-দেবীদের ছবি সম্বলিত কাগজে মুড়ে মাংস বিক্রি করছেন, এই খবর পেয়েই পুলিশ সেখানে ছুটে যায়।
"তখন ওই দোকানের সামনে বিরাট জটলা ছিল, পুরো এলাকায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা দেখা যাচ্ছিল।"
"পুলিশ-কর্মীরা যখন দোকানের মালিক ও কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে যান, তখন ছুরি-চাকু দিয়ে তাদের ওপর প্রাণঘাতী হামলা চালানোরও চেষ্টা হয়।"
click here"পুলিশ এরপর মহম্মদ তালেবকে গ্রেফতার করে চার্জ এনেছে এবং আদালতের নির্দেশে তাকে রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।"
"এলাকায় এখন শান্তি বজায় আছে, কেউ যাতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে না-পারে সে ব্যাপারেও পুলিশ সতর্ক আছে," জানান মি মিশ্রা।
ধৃত মহম্মদ তালেবের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ১৫৩এ, ২৯৫এ এবং ৩০৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে - যার মধ্যে প্রথমটি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো, দ্বিতীয়টি ইচ্ছাকৃতভাবে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা এবং তৃতীয়টি হত্যা প্রচেষ্টার চার্জ।
'সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত'
এদিকে 'মেহেক' রেস্তোরাঁর একজন কর্মী টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকাকে বলেছেন তাদের মালিক কাবাডি বা পুরনো জিনিসপত্রের দোকান থেকেই ওই খবরের কাগজগুলো ঠোঙা বানাতে কিনে এনেছিলেন - তারা কেউ খেয়ালও করেননি ওতে কোনও হিন্দু-দেবদেবীর ছবি আছে।
এই ঘটনা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত বলে তিনি দাবি করলেও মহম্মদ তালেবের গ্রেপ্তারের পর সম্ভলে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো বিজয়োল্লাস করেছে।
বিরোধী দল কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র শামা মোহামেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, গোটা ঘটনাটিই আসলে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র শামা মোহামেদ
ড: মোহামেদের কথায়, "পুলিশের তো বোঝা উচিত ছিল কেউ এটা ইচ্ছে করে করবে না। এই দেশে কি কেউ দেব-দেবীদের ফটো তুলে সেই কাগজ নিয়ে ইচ্ছে করে তাতে মাংস মুড়ে বিক্রি করতে যাবে না কি?"
"ওই দোকানদারের তো অন্তত বেনিফিট অব ডাউট পাওয়া উচিত ছিল!"
"আর আমার আরও যেটা অবাক লাগে, এ দেশের পুলিশ ওই বেচারা দোকানদারকে গিয়ে গ্রেপ্তার করে আনতে পারে, অথচ জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গীরা কীভাবে বিজেপির সদস্য হয়ে যেতে পারে তার কোনও তদন্ত হয় না।"
"সেখানে পুলিশ যাকে লস্কর-ই-তৈবার জঙ্গী বলছে সেই ব্যক্তি কীভাবে বিজেপির আইটি সেল চালাতেন তার কেউ জবাব দিতে পারে না। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির তো আগে জম্মু ও কাশ্মীরে যাওয়া উচিত।"
click here
সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়
ভারতের সোশ্যাল মিডিয়াতেও সম্ভলের এই ঘটনা নিয়ে উত্তপ্ত তর্কবিতর্ক চলছে।
একদল বলছেন, হিন্দু দেবদেবীদের যারা এভাবে অপমান করার সাহস পায় তাদের এই ধরনের কঠোর শাস্তিই প্রাপ্ত।
অপর এক দলের বক্তব্য, মহম্মদ তালেব যদি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে গ্রেপ্তার হন তাহলে বিজেপির সাবেক মুখপাত্র নূপুর শর্মা এখনও জেলের বাইরে কেন?
click here
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন