নতুন করে করোনা সংক্রমণ অনাকাঙ্খিত মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এক মাসের জন্য আবার বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে লাতভিয়া। ইউরোপের মধ্যে এটিই প্রথম দেশ, যারা এমন ব্যবস্থা নিলো। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) হিসাব মতে, বিশ্বের জনসংখ্যার তুলনায় বাল্টিক এই দেশটিতে নতুন করে করোনা সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ। লাতভিয়ার প্রধানমন্ত্রী কৃজানিস কারিন্স সোমবার সন্ধ্যায় বলেছেন, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিপদের মুখে। এ থেকে রক্ষার একমাত্র উপায় হলো টিকা নেয়া। এ সময় তিনি জানান, হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য দায়ী দেশে কম হারে টিকা দেয়া। দেশটির ১৯ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে শতকরা মাত্র ৫৭ ভাগকে পূর্ণ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে পূর্ণ ডোজ টিকা দেয়ার শতকরা হার ৭৪ ভাগ।
এ অবস্থায় লাতভিয়ায় রাত আটটা থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত এক মাসের নৈশকালীন কারফিউ দেয়া হয়েছে। বন্ধ থাকবে সব স্কুল এবং অত্যাবশ্যকীয় নয় এসব সব দোকানপাট। এ সময়ে শুধু অত্যাবশ্যকীয় এমন কারখানা, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এবং গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্র খোলা রাখা যাবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান।
গত সপ্তাহে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইগিলস লেভিটসের করোনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে পজেটিভ ফল পাওয়া যায়। এর একদিন আগে তার সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সুলি নিনিস্তো। তাকেও আইসোলেশনে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপের মধ্যে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লাতভিয়ার সফলতা দেখা যাচ্ছিল। মহামারি শুরুর পর থেকে সেখানে ৩ হাজারেরও কম মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, অলস এবং অসমত টিকা দেয়ার কারণে সেখানে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
লাতভিয়ার সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইলজে ভিঙ্কেলে প্রথম দুই দফা করোনা ভাইরাসের ঢেউ তদারকি করেছিলেন। বলেছেন, তিনি জানতেন একটি নির্দিষ্ট গ্রুপ- বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিকরা, আর্থ সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা নাগরিকরা- টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে সন্দিহান। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এই বিভাজনকে আমরা কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে পারিনি। এখন বাধ্য হয়ে আমাদেরকে লকডাউন দিতে হচ্ছে। যেসব লাতভিয়ান টিকা নিয়েছিলেন তারা এতে হতাশ হতে পারেন। তিনি আরো বলেন, অবস্থানগত কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে টিকা দেয়ার হার এক এক রকম। দেশের কোনো কোনো স্থানে টিকা দেয়া হয়েছে শতকরা ২৫ ভাগেরও কম।
লাতভিয়ার বিপুল সংখ্যক মানুষ রাশিয়ান ভাষায় কথা বলেন। তাদের কাছে রাশিয়ান ভাষার মিডিয়া টিকা নিয়ে শুরুতে সংশয় ঢুকিয়ে দিয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডানিয়েলস পাভলুটস। এখন ইউরোপের সব দেশের তুলনায় লাতভিয়ায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে প্রথম দেশ হিসেবে সেখানে প্রথম নতুন করে লকডাউন দেয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ইউরোপজুড়ে করোনা সংক্রমণ নতুন করে শতকরা ৭ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বে এই অঞ্চলই একমাত্র, যেখানে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উল্লেখ্য, মধ্য এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে টিকা দেয়ার হার কম। এসব দেশকেই মূলত সংক্রমণ আঘাত হেনেছে। কারণ, সেখানকার বিপুল পরিমাণ মানুষ এখনও টিকা নেননি। তাদের মধ্যে টিকা নিয়ে ব্যাপক সংশয় রয়েছে।
বুধবার পোল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এডাম নিজিয়েলস্কি বলেছেন, গত দুই দিনে তার দেশে মহামারির যেন আবার বিস্ফোরণ ঘটেছে। দেশবাসীকে তিনি সতর্ক করে বলেন, করোনা পরিস্থিতি আবার অত্যন্ত গুরুত্বর হয়ে উঠেছে। মে মাসের পর প্রথমবারের মতো পোল্যান্ডে দিনে সংক্রমণ ৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিবেশী স্লোভাকিয়াতে মঙ্গলবার আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪৮০ জন। বসন্তের পরে একদিনে এটাই সেখানে সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা। মার্চের পর মঙ্গলবার করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে বুলগেরিয়াতে। ব্যায়ামাগার, জাদুঘর, ক্যাফে ও অন্য খোলা স্থানগুলোতে যারা যাবেন, তাদের জন্য ভ্যাক্সিন পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক করেছে কর্তৃপক্ষ।
রোমানিয়া এবং ইউক্রেনের স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ছে। এ মাসে এ দুটি দেশে রেকর্ড পরিমাণ মানুষ মারা গেছেন করোনা ভাইরাসে। রাশিয়ায় দিনে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ মারা যাচ্ছেন। কিন্তু ইউরোপের তুলনায় সেখানে টিকাদানের হার নাটকীয়ভাবে কম। রাশিয়ার মাত্র এক তৃতীয়াংশ মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সেখানে নতুন করে কিছু বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়েছে। রাজধানী মস্কোতে ৬০ বছরের ওপরে যাদের বয়স, তাদেরকে চার মাসের জন্য ঘরের ভিতরে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। কোনো কোনো অঞ্চলে ভ্যাক্সিন পাসপোর্ট চালু করা হয়েছে। যদি করোনা সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়তেই থাকে তাহলে পূর্ণাঙ্গ লকডাউনে যাবে মস্কো। বুধবার সরকারি এক নির্দেশে এসব কথা বলা হয়েছে। এই অর্ডার দেখতে পেয়েছে গার্ডিয়ান। এতে বলা হয়েছে, অত্যাবশ্যক নয়- যেমন রেস্তোরাঁ, শপিং মল, জাদুঘর এমন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ৩০ অক্টোবর থেকে ৭ই নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত থাকবে পরিকল্পিত মেডিকেল প্রক্রিয়া।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন