বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহারের এক মাসের মধ্যেই আফগানিস্তানের অর্ধেকের বেশি জেলা দখল করে নিয়েছে তালেবানরা। এখনো অনেক জায়গায় সরকার বনাম তালেবান যুদ্ধ চলছে। কোথাও তালেবানদের কাছ থেকে শহর পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারি বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান, আবার কোথাও নতুন নতুন শহর কব্জা করার মরিয়া চেষ্টায় লিপ্ত তালেবানরা। কারা জয়ী হবেন তা এখনই স্পষ্ট না হলেও বিশ্লেষকরা দাবি করছেন সরকারি বাহিনীর পাল্লাই ভারি। এ নিয়ে তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে এএফপির বুধবারের প্রতিবেদনে।
সেনাবাহিনী : গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ইন্সপেক্টর জেনারেল ফর আফগান রিকনস্ট্রাকশনের (সিগার) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত এপ্রিল পর্যন্ত আফগানিস্তানের জাতীয় প্রতিরক্ষা ফোর্সের মোট সদস্য সংখ্যা তিন লাখ সাত হাজার। এর মধ্যে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, স্পেশাল ফোর্স, পুলিশ এবং গোয়ান্দা কর্মকর্তারাও রয়েছেন। আরও রয়েছেন কমব্যাট ফোর্সের এক লাখ ৮০ হাজার সদস্য। অন্যদিকে তালেবানের সদস্য সংখ্যা সুনির্দিষ্ট জানা না থাকলেও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের গত বছরের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী ৫৫ থেকে ৮৫ হাজার হতে পারে এ সংখ্যা।
অর্থায়ন : বিশ্বের দরিদ্রতম দেশ আফগানিস্তানের বৈদেশিক সহযোগিতার অবস্থা একেবারে নাজুক। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল রিসার্স সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী দেশটির সামরিক বাহিনী পরিচালনার জন্য বছরে প্রয়োজন হয় ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ খরচের ৭৫ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে তারা। আর তালেবানদের অর্থের উৎস পরিষ্কার নয়। তবে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ দল ধারণা করছে তালেবানদের বার্ষিক আয় আনুমানিক ৩০০ মিলিয়ন থেকে দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলো থেকে চাঁদা আরোপ এবং মাদকবাণিজ্য তাদের এ আয়ের উৎস। এমনকি তাদের তহবিল, জনবল নিয়োগ কিংবা অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুত নিয়ে তারা মোটেও উদ্বিগ্ন নয়। কারণ, কাবুল ও ওয়াশিংটন অভিযোগ করে বলেছে, পাকিস্তান, ইরান এবং রাশিয়া তালেবানদের নিয়মিত অস্ত্র ও প্রয়োজনীয় গোলাবারুদ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে। যদিও তিন দেশই এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।
অস্ত্র ও গোলাবারুদ : তালেবান সাম্রাজ্য থেকে পুনরুদ্ধারের পর ২০০১ সাল থেকে আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনীকে সুসজ্জিত ও শক্তিশালী করতে কোটি কোটি ডলার খরচ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সে কারণে আফগান সামরিক বাহিনী প্রযুক্তিগতভাবে তালেবানদের তুলনায় অনেক এগিয়ে রয়েছে। আধুনিক অ্যাসল্ট, নাইট-ভিশন গগল্স, সাঁজোয়া যান, আর্টিলারি এবং ছোট নজরদারি দ্রোনসহ পশ্চিমা অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করছে আফগান বাহিনী। তাদের আছে শক্তিশালী বিমানবাহিনীও। সিগারের তথ্য অনুযায়ী আফগান বাহিনীর কাছে আছে অ্যাটাক হেলিকপ্টারসহ ১৬৭টি বিমানবহর।
অন্যদিকে, তালেবানদের হাতে রয়েছে ছোট ছোট হালকা মানের অস্ত্র। রাশিয়ার ডিজাইনে একে ৪৭ রাইফেল-যেগুলো আঞ্চলিক কালোবাজারেও বিক্রি হয়ে থাকে। যদিও, ২০১৯ সালে তালেবান বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনিও গিস্তোজির লেখা একটি বইতে রকেটচালিত গ্রেনেড, মর্টার, ছোট ছোট রকেট, ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী অস্ত্রের সফল ব্যবহারের কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে, তাদের হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক বিস্ফোরক ডিভাইসসমৃদ্ধ আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী একটি ট্র–প। এরইমধ্যে সরকারি বাহিনীকে হারিয়ে বেশকিছু স্থান থেকে আফগান সৈনিকের কাছ থেকে পশ্চিমা কিছু অস্ত্র, নাইট ভিশন ডিভাইস, অ্যাসল্ট রাইফেল ও কিছু যান ছিনিয়ে নিয়েছে।
সংহতি ও মনোবল : আফগান বাহিনী বছরের পর বছর আত্মবিশ্বাসের পরীক্ষা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সৈনিকদের হতাহত, দুর্নীতি, দেশত্যাগ এবং বিদেশি সৈনিকদের দেশত্যাগ আফগান সেনাদের মনোবলে কিছুটা হলেও চিড় ধরিয়েছে। এমনকি তাদের দুর্বল পরিকল্পনা ও নেতৃত্বকে মনোবল কমানোর জন্য দায়ী করা হচ্ছে। আর তালেবানদের বড় শক্তি হচ্ছে তাদের বৃহত্তর সংহতি। তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ফাটলের খবর পাওয়া গেলেও ধর্মীয় চেতনার পাশাপাশি বস্তুগত লাভের আশা তাদের মনোবল আর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন