যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে অপরাধী প্রত্যার্পণ চুক্তির ঘাটতি সত্ত্বেও মার্কিন অ্যাটর্নিরা বাইডেন প্রশাসনকে অভিবাসন কারাগার থেকে চীনের এক আইনজীবীকে মুক্তি দিতে বলছেন।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, চীন ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ পদ্ধতি ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনা ভিন্নমতাবলম্বীদের ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। রেড নোটিশ সিস্টেমের আওতায় আন্তর্জাতিক পুলিশ কনসোর্টিয়ামের সদস্য দেশ বিদেশে থাকা পলাতকদের গ্রেপ্তার ও ফেরত দিতে অন্য দেশকে অনুরোধ করতে পারে। এই কৌশলটির ফলে যুক্তরাষ্ট্র আটককৃত চীনা নাগরিকদের চীন কর্তৃপক্ষের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারে।
চীনে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিকে জুন মাসে আটক করা হয়েছিল এবং তাকে মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক বাস্তবায়ন (আইসিই) দপ্তরের আটক কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। বার্তা সংস্থা এপি ওই ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি। কারণ চীনে এখনো ওই ব্যক্তির ভাই-বোন বাস করছে। ওই ব্যক্তি দেশে না ফিরলে তার ভাই-বোনকে ফৌজদারি অপরাধের হুমকি দেওয়া হতে পারে।
মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাকে আটক করা হয়েছে। তবে চীনের কোন অভিযোগে তাকে আটকে রাখা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। কিন্তু ওই ব্যক্তির আইনজীবীরা বলছেন, বেইজিংয়ের ভিন্নমতাবলম্বীদের টার্গেট করার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমেরিকান প্রচেষ্টাকে পাশ কাটিয়ে চীন মার্কিন অভিবাসন ব্যবস্থাকে কাজে লাগাচ্ছে। ওই ব্যক্তি ও তার পরিবার-স্বজন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চাচ্ছে।
গত জানুয়ারিতে জারি করা এক রেড নোটিশে এই ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, খনির ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধ মুনাফা অর্জনের দলনেতা তিনি। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করতে তিনি সাবেক বন্দীদেরকে নিয়োগ করেছেন। তবে ওই ব্যক্তির আইনজীবীরা বলেছেন, চীনের আইনি ব্যবস্থার অন্যান্য নথি দেখায়, তাকে এমন অপরাধের জন্য ফাঁসানো হচ্ছে যা ইতিমধ্যে একই অপরাধে অন্যদের ফাঁসানো হয়েছে।
ওই ব্যক্তির এক আইনজীবী জন স্যান্ডওয়েগ বলেছেন, ‘চীনসহ এমন কিছু দেশ আছে যারা ইন্টারপোলের রেড নোটিশ সিস্টেমকে অপব্যবহার করে।’ আইসিই’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক স্যান্ডওয়েগ বলেন, ‘সংস্থাটি রেড নোটিশের মাধ্যমে ‘‘আইন মেনে চলা কর্মী এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের নিপীড়ন চালিয়ে যাওয়ার হাতিয়ার’’ হয়ে উঠেছে।’
আইসিই বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রবেশের পর ওই ব্যক্তির ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। রেড নোটিশের কারণে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা বা এটি তার ক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলবে- সে বিষয়ে এজেন্সি সরাসরি কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়নি।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত চীনা দূতাবাসা ও ইন্টারপোল এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। ভুক্তভোগী ব্যক্তির আইনজীবীদের মতে, চীনা কর্তৃপক্ষ যখন একটি পরিকল্পিত শিল্প পার্কের জন্য তার বাড়ি দখল করতে চেয়েছিল তখন তিনি গ্রামের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি গ্রামবাসীকে চীনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করার অনুমতি দিয়েছিলেন। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীকে প্রতিবাদ করতে সাহায্য করেছিলেন।
ভুক্তভোগী ব্যক্তি বলেন, ‘নিজ গ্রামে চীন সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য তাকে ৩০ দিন জেলে রাখা হয়েছিল। পরে তিনি পরিবার নিয়ে হংকংয়ে পালিয়ে যান। সেখানেও বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন। তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হবে এই আশঙ্কায়, তিনি পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। তবে তার ভিসার মেয়াদ ছিল মাত্র ছয় মাস।’
সূত্র : এপি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন