আফগানিস্তানের আরও তিন শহর দখলে নিতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তুমুল লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তালেবান যোদ্ধারা। লড়াই চলছে। সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করছে আফগানিস্তান প্রস্তুতিতে থাকা বিদেশি বাহিনী। এ অবস্থায়ই আক্রান্ত এলাকাগুলো থেকে পালিয়ে যাচ্ছে নিরস্ত্র বাসিন্দারা। রোববার এসব তথ্য জানিয়েছে বিবিসি ও এএফপি।
দখলের লক্ষ্যে তালেবানরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন শহর কান্দাহার, হেরাত ও লস্করগাহে ঢুকে পড়েছে। গত রাত থেকে থেমে থেমে চলছে যুদ্ধ। সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিদেশি সেনাদের আফগানিস্তান ছাড়ার ঘোষণা আসার পর তালেবান ক্রমশ দেশটিতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার প্রচেষ্টায় এগিয়েছে বহুদূর। অধিকাংশ গ্রামীণ এলাকাসহ দেশটির ৯০ শতাংশ দখলে নেওয়ার দাবি করেছে তারা। এ কারণে দেশটির প্রধান শহরগুলোর ভাগ্য নিয়ে ভীষণ উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। উভয়পক্ষ নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলে নিতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে সরকারি সেনাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চলে জাতিসংঘের একটি চত্বর হামলার শিকার হওয়ার একদিন পর শনিবার হেরাতের উপকণ্ঠে আফগান ও তালেবান বাহিনীর মধ্যে আবার সংঘর্ষ হয়। তালেবান আফগানিস্তানে হেরাত প্রদেশসহ বেশ কয়েকটি জেলা দখল করে নিয়েছে। তালেবানরা ইরান এবং তুর্কমেনিস্তান সংলগ্ন দুটি সীমান্ত ক্রসিংও দখল করেছে। দুপক্ষের হামলায় হেরাত থেকে শত শত মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। হেরাতের গভর্নর আব্দুল সবুর কানি বলেন, ইনজিল এবং গুজারা জেলায় তুমুল যুদ্ধ হয়েছে। কানি বলেন, এই মুহূর্তে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্বে লড়াই চলছে। আমরা সতর্কতার সঙ্গে এবং বেসামরিক লোকজনের হতাহত এড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।
সরকারি বাহিনী হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী লস্করগাহের ১০ শয্যার হাসপাতালের কাছে বিমান হামলা করেছে। হেলমান্দের প্রাদেশিক জনস্বাস্থ্য পরিচালক জানিয়েছেন, হাসপাতালটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এ সময় একজন নিহত এবং মাত্র দুজন আহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। অন্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এর আগে তালেবানরা তাদের আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটি জব্দ করেছিল।
হেরাতের বাসিন্দারা বলছেন, শহরের কিছু অংশ এখনো নিরাপদ রয়েছে এবং কিছু মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শহর রক্ষায় সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে আশির দশকে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করা এক কমান্ডার।
শনিবার তুমুল লড়াই চলা কান্দাহারের একজন সংসদ সদস্য বিবিসিকে বলেছেন, ভয়াবহ এক ঝুঁকির মুখে আছে তার শহর। এখানে অপেক্ষা করছে মানবিক বিপর্যয়। গুল আহমাদ কামিন নামে ওই সাংসদ বলেছেন, প্রতি ঘণ্টায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে এবং শহরের মধ্যে উভয়পক্ষের মধ্যে যেভাবে লড়াই চলছে, গত বিশ বছরে কান্দাহারে এমন সংঘর্ষ দেখেনি কান্দাহারবাসী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, তালেবানের প্রধান মনযোগ এখন কান্দাহার দখল। কারণ কান্দাহারকে তারা তাদের অস্থায়ী রাজধানী বানাতে চায়। যদি তারা কান্দাহারের নিয়ন্ত্রণ পায় তাহলে এই অঞ্চলের আরও পাঁচ থেকে ছয়টি প্রদেশের দখলও তালেবানের হাতে চলে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। এ লক্ষ্যে শনিবার রাতেই কান্দাহারের বিমানবন্দরে রকেট হামলা চালিয়েছে তালেবানরা। রোববার বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির মুখপাত্র জানিয়েছেন, রাতে বিমানবন্দরটি লক্ষ্য করে অন্তত তিনটি রকেট ছুড়েছেন তারা। সরকারি বাহিনীগুলোর পরিচালিত বিমান হামলায় বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এ হামলাটি চালানো হয়েছে।
এই জনপ্রতিনিধি আরও জানান, শহরটির চারপাশে তালেবান যোদ্ধারা অবস্থান নিয়েছে। তালেবান পূর্ণ শক্তি নিয়ে কান্দাহারে ঢোকার চেষ্টা করলে সরকারি বাহিনীর পক্ষে প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও গোলা-বারুদের ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। শহরটি জনবহুল হওয়ায় সরকারি সেনারা এটা করতে পারবে না। আরও অন্তত পাঁচটি পৃথক স্থানে লড়াইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে আফগান বাহিনীকে সহায়তায় এখনো তালেবান যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রচেষ্টায় বিমানবন্দরের পাশের একটি জেলা পুনরায় দখলে নিয়েছে সরকারি বাহিনী।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হেলমান্দের রাজধানী লস্করগাহ শহরের কেন্দ্র থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে সরকারি বাহিনীর সেনাদের সঙ্গে তালেবান যোদ্ধাদের লড়াই চলছে। যদিও শনিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে শহরের দখল ফিরিয়ে নিয়েছে বলে দাবি করেছে সরকারি বাহিনী। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে থাকা এ অঞ্চলের এক বাসিন্দা হালিম কারিমি বলেন, ‘না তালেবানরা আমাদের প্রতি দয়া করবে, না সরকার বোমা হামলা বন্ধ করবে।’ আফগান বাহিনীর কমান্ডার বলছেন, তাদের শক্ত প্রতিরোধ ও পালটা অভিযানে তালেবানদের ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছে। তা ছাড়া চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে দুপক্ষের এ যুদ্ধের কারণে ত্রাণ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বন্যার্তদের উদ্ধার ও সহযোগিতায় দুর্গত এলাকাগুলোতে কাজ করছে আফগান রেড ক্রিসেন্ট।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন