পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলিকে নিয়ে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ার দাবি তুলেছেন বিজেপির এক পার্লামেন্ট সদস্য। আলিপুরদুয়ার থেকে নির্বাচিত জন বার্লা নামের ওই এমপি বলেছেন, তিনি এই দাবিটি লোকসভাতেও তুলবেন।
উত্তরবঙ্গের আরও কয়েকজন বিজেপি সংসদ সদস্য দাবির সঙ্গে সহমত হলেও তারা জোর গলায় বলছেন, এটি দলের সিদ্ধান্ত নয়। খবর বিবিসি বাংলার
তবে এই দাবি অঙ্কুরেই নাকচ করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেছেন পৃথক কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চল গড়ে কি উত্তরবঙ্গকে কাশ্মীর বানাতে চাইছে বিজেপি?
বিজেপি বলছে জানিয়েছে,বার্লা জনপ্রতিনিধি, তাই জনতার কোনও দাবি তিনি তুলতেই পারেন। কিন্তু এ বিষয়ে সাংগঠনিকভাবে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও হয় নি।
উত্তরবঙ্গে বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, তিনি উত্তরবঙ্গের জনপ্রতিনিধি। সেখানকার মানুষের হয়তো চাহিদা আছে, সেটা তিনি তুলে ধরেছেন। এলাকার মানুষের কোনও দাবির কথা তিনি বলতেই পারেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে দল কোনও সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ বিষয়ে। এরকম কোনও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নি।
এর আগে উত্তরবঙ্গে যখন কামতাপুরী বা গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি উঠেছে - তার পিছনে দীর্ঘদিনের দাবি-দাওয়া থেকেছে - মানুষের সমর্থনও পেয়েছে এগুলি।
কিন্তু ভোটের ফল বেরনোর মাসখানেকের মধ্যেই পৃথক রাজ্যের দাবি কেন উঠল?
আলিপুরদুয়ার থেকে নির্বাচিত জন বার্লা বলেছেন, তিনি এই দাবি লোকসভাতেও তুলবেন।
সেনগুপ্ত বলছিলেন, হঠাৎ করে কেন এরকম দাবি, বিষয়টা এভাবে দেখলে ভুল হবে। কোনও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত তো নেওয়া হয় নি!
যদিও বিজেপি এই দাবির থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখছে, তবে রাজ্য ভাগের প্রসঙ্গ সামনে আসায় কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।
তিনি বলেন, দক্ষিণবঙ্গ আর উত্তরবঙ্গ দুটোই পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে। কোনও রকম ডিভাইড এন্ড রুল আমরা করতে দেব না। এগুলো রাজ্য সরকারের অনুমোদন ছাড়া করা যায় না।
তার পাল্টা প্রশ্ন, কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল মানে কী! কাশ্মীরের মতো মুখ বন্ধ করে রেখে দেওয়া? তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া? তাদের নজরবন্দী করে রাখা? বাংলাকে টুকরো করে কার স্বার্থ চরিতার্থ করছে বিজেপি?
মমতা ব্যানার্জী বলেন, কদিন আগে নির্বাচন হয়ে গেছে। এত বড় ধাক্কা খাওয়ার পরেও লজ্জা হয় না? বাংলা ভাগ করার দিকে যারা তাকাবে, তারা যেন মনে রাখে বাংলার মানুষ তাদের উপযুক্ত জবাব দেবে।
দৈনিক উত্তরবঙ্গ সংবাদের সহযোগী সম্পাদক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গৌতম সরকারও বলছিলেন বিজেপি এটা ভালই বোঝে যে পশ্চিমবঙ্গকে ভাগ করার কোনও দাবি তুললে সেটা গোটা রাজ্যের মানুষের ভাবাবেগে আঘাত লাগবে।
তবে সরকার মনে করেন যে সংগঠন ধরে রাখার জন্যই বিজেপি এরকম একটি দাবি সামনে আনছে।
গৌতম সরকার বলেন, এটা ঘটনা যে উত্তরবঙ্গেই এবার বিজেপি ভাল ফল করেছে। কিন্তু পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে বিজেপি নিজেদের সংগঠন ধরে রাখতে পারবে কী না তা নিয়ে দলের ভেতরেই সন্দেহ আছে। যেখানে যত বিজেপি কর্মী মার খাচ্ছে, সেখানে যে সব সময়ে নেতারা পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারছে তা নয়। সেজন্যই দলে দলে বিজেপি কর্মী তৃণমূলের দিকে পা বাড়িয়ে আছে। নেতাদের প্রতি কর্মীদের অসন্তোষ বাড়ছে।
তার কথায়, আর এই পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে, তাহলে বিজেপির পক্ষে সংগঠন ধরে রাখা কঠিন হবে। সেজন্যই এরকম একটা দাবি ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে যে পৃথক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল চাই। সেটা হলে তো বিজেপি-ই ক্ষমতাসীন দল হবে।সেই আশা দিয়ে সংগঠন ধরে রাখার প্রচেষ্টা বলেই আমার মনে হয়।
বিজেপির কয়েকটি সূত্র বলছে, এই দাবি নিয়ে আলোচনা হয়েছে যে বৈঠকে, সেখানে রাজ্য নেতারা তো বটেই, এমনকি কেন্দ্রীয় নেতারাও ছিলেন।
আর এস এস থেকে এসে বিজেপি সংগঠনের দায়িত্ব সামলান, এমন নেতাদের হাজির থাকার কথাও নিশ্চিত করা গেছে।
ওই সূত্রগুলি অভিযোগ করছে, বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে তুলনামূলক ভাল ফল করার পরে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের কর্মী সমর্থকদের ওপরে ব্যাপক অত্যাচার চালাচ্ছে। এখন দলের কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতেই কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের দাবি তোলা হয়েছে।
সেটা হলে যে ওই অঞ্চলে রাজনৈতিকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে বিজেপি সেটা যেমন বলা হচ্ছে, আবার কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির পরে যেভাবে সব রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, রাজনৈতিক নেতাদের গৃহবন্দী করা হয়েছিল, সেরকম যদি করা যায়, তাহলে তৃণমূল কংগ্রেসের সব নেতা কর্মীদের ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে - এমন যুক্তিও দেওয়া হচ্ছে দলীয় কর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন