ভারতে মুম্বাইয়ের শহরতলি কান্ডিভালিতে একটি অভিজাত বহুতল আবাসন সোসাইটির নাম হীরানন্দিনী হেরিটেজ। সেখানে বাসিন্দারা সবাই রীতিমতো ধনী, নানা প্রয়োজনে তাদের ঘন ঘন বিদেশেও যেতে হয়।
ভারতে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালগুলোতে এখন টিকার আকাল, অপেক্ষাও করতে হচ্ছে দীর্ঘক্ষণ - এই সব ঝামেলা এড়াতে অনেক আবাসনের বাসিন্দারাই নানা বেসরকারি হাসপাতালের সহযোগিতায় নিজেদের সোসাইটিতেই টিকাদান শিবিরের আয়োজন করছেন।
হীরানন্দিনী হেরিটেজও নিজেদের ক্যাম্পাসে এমনই একটি শিবির বসিয়েছিল গত ৩০শে মে, রবিবার।
রাজেশ পান্ডে নামে এক ব্যক্তি নিজেকে কোকিলাবেন আম্বানি হাসপাতালের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়ে ওই শিবিরের আয়োজন করেন - প্রতি ডোজ কোভিশিল্ডের জন্য সেখানে ১২৬০ রুপি (প্রায় ১৮ ডলার) করে চার্জও করা হয়।
আবাসনের মোট ৩৯০ জন বাসিন্দা সেখানে 'টিকা' নেন - তাদের অনেকেরই বিদেশ যাওয়ার জন্য ভ্যাকসিন সার্টিফিকেটেরও প্রয়োজন ছিল।
ভারতে একিটি ভ্যাক্সিনেশন সেন্টারে কোভিশিল্ড দেওয়া হচ্ছে। ফাইল ছবি
কিন্তু শিবিরের আয়োজকরা সেদিন কোনও সার্টিফিকেট দিতে পারেননি - এমন কী টিকা গ্রহীতাদের সেলফি তোলারও অনুমতি দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছিল, সার্টিফিকেট পরে মোবাইলে চলে আসবে।
কিন্তু ক্যাম্পওলারা মোট পাঁচ লক্ষ রুপির পেমেন্ট বুঝে নিয়ে চলে যাওয়ার দুসপ্তাহ পর এখন হীরানন্দিনী হেরিটেজের বাসিন্দাদের মনে হচ্ছে - টিকা দেওয়ার নামে তাদের সঙ্গে আসলে বিরাট একটা ধোঁকাবাজি করা হয়েছে।
গতকাল স্থানীয় পুলিশের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করে ওই আবাসনের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, একদল প্রতারক টিকা দেওয়ার নামে তাদের সঙ্গে জালিয়াতি করেছেন এবং তাদের 'স্বাস্থ্য-ঝুঁকি'তে ফেলেছেন।
কিন্তু হীরানন্দিনী হেরিটেজের বাসিন্দাদের কেন মনে হচ্ছে যে টিকা দেওয়ার নামে তাদের সঙ্গে জালিয়াতি করা হয়েছে?
ঋষভ কামদার নামে ওই বহুতলের এক বাসিন্দা বিবিসিকে জানান, "আমাদের প্রথম খটকা লাগে যখন টিকা নেওয়ার পরও শ'চারেক লোকের কারওর বিন্দুমাত্র কোনও সাইড এফেক্টস দেখা যায়নি। না জ্বর, না গা ম্যাজম্যাজ পর্যন্ত!"
"তারপর এক একজনের সার্টিফিকেট আসা শুরু হয় এক এক হাসপাতালের নামে। কারওটা দশদিন বাদে, কারওটা হয়তো বারোদিন পর।"
"পরে আমরা জানতে পেরেছি, তার সবগুলোই জাল", বলছিলেন মি কামদার।
হীরানন্দিনী হেরিটেজের অনেক বাসিন্দাই 'সার্টিফিকেট' পেয়েছেন মুম্বাইয়ের নানাবতী হাসপাতালের নামে।
কিন্তু গতকাল রাতেই নানাবতী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, তারা ওই আবাসনে কোনও টিকাদান শিবিরের সঙ্গে কখনই যুক্ত ছিলেন না।
তাদের নামে এই 'জাল সার্টিফিকেট' ইস্যু করার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করা হচ্ছে বলেও নানাবতী কর্তৃপক্ষ জানান।
মুম্বাই নর্থ জোনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দিলীপ সাওয়ান্তও নিশ্চিত করেছেন যে গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
আর এরই মধ্যে হীরানন্দিনী হেরিটেজের বাসিন্দাদের যে প্রশ্নটা সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে, তা হল কোভিশিল্ডের নাম করে তাদের শরীরে আসলে কী দেওয়া হল?
সেদিন 'টিকা' নেওয়া দিলীপ জোয়ালার কথায়, "ওটা যে টিকা ছিল না সেটা তো এখন দিব্বি বুঝতে পারছি। কিন্তু শরীরে তাহলে কীসের ইঞ্জেকশন দিয়ে গেল, সেটাই এখন আমাদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে!"
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন