স্থির লক্ষ্যে এগিয়ে গেলে হাতের মুঠোয় স্বপ্ন ধরা দেয়। তবে এর মধ্যে আসে নানা বাধা, যেগুলো কাটিয়ে উঠতে হয়। তাই-ই করেছেন ভারতের উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের এক নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান মনু চৌহান। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ বিনা খরচে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
পরীক্ষা দিয়ে তিনি স্ট্যানফোর্ডে বিনা খরচে পড়াশোনার সুযোগ অর্জন করেছেন। ১ হাজার ৬০০ নম্বরের পরীক্ষায় মনু পেয়েছেন ১ হাজার ৪৭০ নম্বর। তার এই ফল দেখে পড়াশোনার ১০০ শতাংশ খরচ বহন করতে রাজি হয়েছে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
উত্তরপ্রদেশের আলিগড় জেলার আক্রাবাদ গ্রামে বাড়ি মনু চৌহানের বাড়ি। তার বয়স ১৮ বছর। এ বছরই দ্বাদশের পরীক্ষায় বসার কথা ছিল মনুর। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় দেশের অসংখ্য ছাত্র ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। মনুও তাদের একজন। তবে এর মধ্যেই এলো সুখবর। আগামী সেপ্টেম্বরেই তাকে ডেকে পাঠিয়েছে স্ট্যানফোর্ড। সেখানে তার পড়াশোনার বিষয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অর্থনীতি।
এর আগে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন ইলন মাস্ক, সুন্দর পিচাই, মুকেশ আম্বানি, টাইগার উডস ও মিট রমনির মতো ব্যক্তিত্বরা।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মনু চৌহানের বাবা একটি বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেন। চরম আর্থিক অনটনের মধ্য দিয়ে তিনি বড় হয়েছেন। স্ট্যানফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে পড়ানোর ক্ষমতা ছিল না পরিবারের। তবে অভাব থাকলেও পড়াশোনা আর পরিশ্রমে পিছিয়ে থাকেননি মনু। বন্ধ করেননি স্বপ্ন দেখা।
মনু বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার খরচ থেকে শুরু করে তার আবেদনপত্র ও পরীক্ষার খরচ সবই নিজের স্কলারশিপের টাকায় বহন করেছেন তিনি। এ ব্যাপারে তাকে সাহায্য করেছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ।
জাতিসংঘের কর্মী হিসেবে কাজ করা মনুর বহু দিনের ইচ্ছা। ভারতীয় শিশুদের শিক্ষা সংক্রান্ত নীতি নিয়েও কাজ করতে চান তিনি। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই সব লক্ষ্যকে মাথায় রেখেই পড়াশোনা করবেন বলে জানিয়েছেন মনু।
গ্রামের প্রাথমিক স্কুলেই মনুর পড়াশোনার প্রথম পাঠ। তবে তিনি মনে করেন, তার পড়াশোনা এবং মানসিক গঠনের অনেকটাই তৈরি হয়েছে উত্তরপ্রদেশের বিদ্যাজ্ঞান স্কুলে। আড়াই লাখ ছাত্রের মধ্য থেকে প্রতি বছর ২৫০ জনকে বেছে নেয় এই স্কুল। যেসব পরিবারের বার্ষিক আয় ১ লাখ টাকার নিচে, সেসব পরিবারের মেধাবী ছাত্ররাই এই স্কুলে সুযোগ পান। সেই ২৫০ জনের একজন হয়েছিলেন মনু।
মনু দশম শ্রেণিতে ওই স্কুলে ৯৫.৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে বোর্ডের পরীক্ষায় পাস করেন। তবে পড়াশোনা ছাড়াও অন্যান্য বিষয়েও প্রথম সারিতে থেকেছেন বরাবর। স্কুল স্তরের টেবল টেনিসে সোনার মেডেল পেয়েছেন। বিতর্ক সভাতেও প্রথম হয়েছেন বেশ কয়েক বার।
মনু বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। ছুটিতে যখন বাড়ি ফিরতাম বাবার সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন নীতি নিয়ে আলোচনা হতো। আমিও সেই আলোচনায় নিজের মত জানাতাম। দেখতাম, আমার ভাবনার ধরনের প্রশংসা করছেন বাবা। তখন থেকেই বুঝেছিলাম, আমার আগ্রহের বিষয় এটাই। পরে আমার শিক্ষকরাও এ ব্যাপারে আমাকে উৎসাহিত করেছিলেন।’
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়কেই বেছে নিলেন কেন, জানতে চাইলে মনু বলেন, তিনি যে বিষয়ে কাজ করতে চান সে বিষয়ে গবেষণার অনেক সুযোগ দরকার। তাকে সেই সুযোগ দেবে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন