ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মির অঞ্চলের স্থানীয় জনসংখ্যার ভারসাম্য পরিবর্তনে নয়াদিল্লি অকাশ্মিরিদের বসতি স্থাপনের ৩৪ লাখ ভুয়া অনুমতি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জাহিদ হাফিজ চৌধুরি ইসলামাবাদে মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, 'ভারত দখল করা ভূমির জনসংখ্যার কাঠামো পরিবর্তনের নকশা অব্যাহত রেখেছে, যা চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনসহ আন্তর্জাতিক সকল আইনের লঙ্ঘন।'
তিনি বলেন, কাশ্মিরিরা ইতোমধ্যেই গত ২২ মাস নজিরবিহীন সামরিক দখলদারিত্ব, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন।
কাশ্মিরের স্বায়তশাসনে ভারতীয় সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারা নয়াদিল্লির বিলুপ্ত করার দিকে ইঙ্গিত করে জাহিদ হাফিজ চৌধুরি বলেন, 'ভারতের ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট অবৈধ একতরফা পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে কাশ্মিরি জনগণের জীবন ও জীবিকা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে।'
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা দলের (বিজেপি) নিয়ন্ত্রিত ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভা লোকসভায় কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার বিষয়ক সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ৩৭০ ধারা বাতিল করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকার ভারতীয় নিয়ন্ত্রণাধীন পুরো কাশ্মির অঞ্চলকে দুই ভাগ করে বিভক্ত অঞ্চলটির ওপর কেন্দ্রের শাসন চাপিয়ে দেয়া হয়।
নয়াদিল্লির এই উদ্যোগের পর পুরো অঞ্চলকে লকডাউনের আওতায় নিয়ে হাজার হাজার লোককে বন্দী, চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা চালু করার অভিযোগ করছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
পাকিস্তানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব আরো বলেন, দখল করা ভূমিতে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অংশ হিসেবে ভারত কাশ্মিরি নারীদের ধর্ষণ, নির্যাতন, অবমাননাকর আচরণ ও হত্যার শিকারে পরিণত করার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, অধিকৃত ভূমিতে ভারতের স্থূল ও নিয়মতান্ত্রিক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অপরাধীদের কাছ থেকে জবাবদিহিতা আদায় না হওয়ার বিষয়টি জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনসহ মানবাধিকার সংস্থা, বৈশ্বিক গণমাধ্যম ও সারাবিশ্বের নাগরিক সমাজ নজর রাখছেন।
১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মির নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। উভয়দেশই পুরো ভূখণ্ডটি নিজেদের দাবি করছে। ভূখণ্ডটির অধিকার নিয়ে দুই বার যুদ্ধে জড়িয়েছে উভয়দেশ।
কাশ্মিরের অনেক বাসিন্দাই পাকিস্তানে সাথে যুক্ত হওয়া বা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সমর্থন করে আসছেন। নয়াদিল্লি কাশ্মিরিদের এই মনোভাব ও সংশ্লিষ্ট তৎপরতাকে পাকিস্তানের সমর্থনপুষ্ট সন্ত্রাস হিসেবে বর্ণনা করে আসছে। অন্যদিকে পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
পাকিস্তান, ভারত ও স্থানীয় কাশ্মিরিদের এই লড়াইয়ে সরকারি বাহিনীর সদস্য ও বিচ্ছিন্নতাকামী বিদ্রোহীসহ হাজার হাজার সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে।
সূত্র : ইয়েনি শাফাক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন