নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার ট্রাফিক পুলিশবক্সের সামনে ব্যাগে করে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) রেখে যায় নব্য জেএমবির সদস্যরা। জঙ্গিবাদবিরোধী আভিযানিক কার্যক্রমে যুক্ত ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রাথমিক তদন্তে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
সিদ্ধিরগঞ্জের ট্রাফিক পুলিশবক্সের সামনে গত সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতরে আইইডি দেখতে পান পুলিশ সদস্যরা। এ অবস্থায় ট্রাফিক পুলিশবক্স এলাকাটি ঘিরে রাখা হয়। নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশের যান চলাচলও। পরে সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়। তারা গিয়ে ব্যাগের ভেতরে বস্তুটিকে রিমোট কন্ট্রোলচালিত আইইডি নিশ্চিত করে। পরে রোবট দিয়ে আইইডির নিরাপদ বিস্ফোরণ ঘটান সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা। জঙ্গিদের গোপন চ্যানেলে নব্য জেএমবি এ ঘটনার দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন সিটিটিসির কর্মকর্তারা।
জঙ্গিবাদ দমনে নিয়োজিত সিটিটিসি, র্যাব ও এটিইউর কর্মকর্তারা বলছেন, নব্য জেএমবির নেতৃত্ব এখন তিনটি প্রধান গ্রুপে বিভক্ত। এর মধ্যে মূল গ্রুপ হিসেবে পরিচিত অংশের আমির মাহাদী হাসান জন। তিনটি গ্রুপের যে কোনো একটি অংশ এই আইইডি রেখে যেতে পারে বলে কর্মকর্তারা ধারণা করছেন। তারা বলছেন, এর আগে ঢাকা ও খুলনার বিভিন্ন ট্রাফিক বক্সের পাশে আইইডি রেখে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব আইইডি মূলত হাতে তৈরি। তবে সর্বশেষ সিদ্ধিরগঞ্জে পাওয়া আইইডিটি আগেরগুলোর চেয়ে বেশি শক্তিশালী। এ থেকে কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, নব্য জেএমবির আইইডি তৈরির বিশেষজ্ঞরা আগের চেয়ে বেশি পারদর্শী হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রহমত উল্লাহ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- ওই আইইডি নব্য জেএমবির সদস্যরা সেখানে রেখে যায়। ঘটনাটি বিস্তারিত তদন্তের পর সবকিছু পরিষ্কার হওয়া যাবে।’
এর আগে ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানে ট্রাফিক বক্সের পাশে রেখে যাওয়া আইইডি বিস্ফোরণে ট্রাফিক পুলিশের দুই সদস্যসহ তিনজন আহত হন। এর পর একই বছরের ২৬ মে রাতে মালিবাগ মোড়ে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) একটি পিকআপ ভ্যানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ট্রাফিক পুলিশের এক এএসআইসহ তিনজন আহত হন। ওই বছরের ২৩ জুলাই রাতে পল্টন ও খামারবাড়িতে ট্রাফিক পুলিশবক্সের পাশে আইইডি ফেলে রেখে যায় সন্দেহভাজন জঙ্গিরা। ওই বছরের ৩১ আগস্ট মধ্যরাতে সায়েন্সল্যাব এলাকায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের যাত্রাপথে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তাতে একজন এএসআই এবং একজন কনস্টেবল আহত হন। প্রতিটি ঘটনার দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নব্য জেএমবির সদস্যরা ট্রাফিক পুলিশবক্সকে সহজ টার্গেট বানানোর কারণে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সব ট্রাফিক পুলিশের বক্সে সিসি ক্যামেরা লাগানোর একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। পরে ঢাকার ট্রাফিক পুলিশের বক্সগুলোয় সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়।
পুলিশের ওপর এসব হামলার ঘটনায় ২০১৯ সালে শেষদিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ‘জঙ্গি আস্তনা’ থেকে বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় ফরিদ উদ্দিন রুমি ও মিশুক খান মিজানকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। মূলত তাদের দুজনকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত নব্য জেএমবির নেটওয়ার্কটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উঠে আসতে থাকে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে মেলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ওই তথ্যের ভিত্তিতে এসব ঘটনায় জড়িত নব্য জেএমবির উলফ প্যাকের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন