করোনার প্রথম ধাক্কা ভালভাবেই সামাল দিতে পেরেছিল ভারত। যদিও করোনা ঠেকাতে মন্ত্রপাঠ, এমনকি গো-মূত্র খাওয়ার মতো কাণ্ডও ঘটে দেশটিতে। লকডাউন ছিল ১ মাসের বেশি সময় ধরে। ফলে সংক্রমণের আচঁ পুরো দেশজুড়ে খুব একটা লাগেনি।
করোনার প্রথম ধাক্কার পর টিকার জন্য বিশ্বজুড়ে তোড়জোড় শুরু হলে ভারত সেই সুযোগটি কাজে লাগায়। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি হয় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। এরপর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উপহার হিসেবেও টিকা পাঠায় ভারত। নামও দেয়া হয়েছিল ‘মৈত্রি টিকা’। নিজ দেশে টিকাদান কর্মসূচি চালু করার পর টিকা রপ্তানিও শুরু করে তারা।
সে সময় অনেকে বলছিল, দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের আধিপত্য কমাতে ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও গাঢ় করতেই টিকা কূটনীতিকে কাজে লাগাচ্ছে। চীন অনেকটা পিছিয়েও পড়ে সে সময়।
অনেকটা হাসির ছন্দে চলছিল মোদি সরকার। কিন্তু সর্বনাশ ঘটল করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে। ব্রিটেনের অভিজ্ঞতা দেখে গত নভেম্বরেই বিজ্ঞানীরা ভারতকে সতর্ক করে দেন যে, ভারতে করোনা সংক্রমণের আরও মারাত্মক দ্বিতীয় ধাক্কা আসতে চলেছে। ওই সতর্কবার্তা সত্ত্বেও পরিকাঠামোগত উন্নতির দিকে মনোযোগ ছিল না ভারত সরকারের। আর তার খেসারত দিতে হচ্ছে ভারতবাসীকে।
পুরো স্বাস্থ্য কাঠামো এক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটির। হাসপাতালগুলোতে জায়গা নেই, রোগীতে ভর্তি বারান্দা, করিডোর। অক্সিজেনের তীব্র সংকট রাজ্যে রাজ্যে। রয়েছে ওষুধের ঘাটতি। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন ও স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণের পদত্যাগ দাবি করেছেন অনেকে।
সম্প্রতি সেরাম ইনস্টিটিউটকে চুক্তি অনুযায়ী টিকা দিতে না পারায় আইনি নোটিশ পাঠায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এদিকে,দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের টিকা দ্রুত সরবরাহ করার লক্ষ্য নিয়ে একটি সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। অর্থাৎ চীনের নেতৃত্বে ছয়টি দেশ নিয়ে গঠিত হতে পারে ইমার্জেন্সি কোভিড ভ্যাকসিন স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি ফর সাউথ এশিয়া।
যে পাঁচটি দেশকে চীন প্রস্তাব দিয়েছে, সেগুলো হল বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান । বাংলাদেশ এই কাঠামোতে যোগ দিতে `নীতিগতভাবে সম্মতি` জানিয়েছে ।সম্মতি জানিয়েছে প্রস্তাব পাওয়া অন্য দেশগুলোও। ফলে ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ভারত থেকে টিকা পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিচ্ছে অন্যান্য দেশগুলো। নিজ দেশের মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে এখন বেসামাল ভারত, অন্যদের দিকে তাকানোর সময় নেই তাদের। আর এই অবস্থায় টিকা কৌশলকে কাজে লাগাতে চায় চীন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন