নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতেই কি নির্বাচন কমিশন ও সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এমন নাটকীয়তা তৈরি করছে, এমন প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
শেখ হাসিনা নিজের মত করেই নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। নিজের পছন্দের লোকদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের পর আওয়ামী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘোষণা করেছিলেন বিরোধী দলের আস্থা অর্জন করাই হবে তাদের প্রধান কাজ। এই আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে অনেক নাটকই ইতোমধ্যে করেছেন। এবার নতুন নাটক শুরু হয়েছে আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) সংশোধনী নিয়ে। নির্বাচন কমিশন আরপিও সংশোধনীর জন্য সরকারের কাছে কিছু সুপারিশ পেশ করেছে। সরকার এ গুলো অনুমান না করে ঝুলিয়ে রেখেছে। এখন নির্বাচন কমিশনার এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
আওয়ামী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়াল সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, আরপিও নিয়ে সরকারের একটি বক্তব্য শুনতে চান তারা।
তিনি জানান, কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে সাড়া না দেয়ার পর দুইবার চিঠি পাঠিয়েও জবাব পায়নি কমিশন। এরপর ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জবাব দিতে সময় বেঁধে দিয়ে কড়া ভাষায় আবার চিঠি দেয়ার পর রোববার (২৭শে নভেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানিয়ে দেন, তারা অনুরোধ করেই যাবেন, এটা হতে পারে না।
তিনি বলেন, আইন তো আর কমিশন সরকার না, করবে পার্লামেন্ট ও সরকার। তারা যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেটির বিপরীতে সরকার অবশ্যই মনে করতে পারে এর যুক্তি নেই, তাহলে তারাও পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। কিন্তু একটি জবাব তো দিতে হবে।
আওয়ামী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এ বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে নিজেদের প্রতি বিরোধী দল গুলোর আস্তা অর্জনের লক্ষ্যেই কি এমন নাটকীয়তা করছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন! ইতোমধ্যে ইভিএম সহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকার যেভাবে চাইছে সেই পদক্ষেপই নিয়েছে এই কমিশন। সরকারের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে কমিশন কোন সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায়নি।
সিইসি বলেন, আমরাও তো অনন্তকাল ধরে একটা ম্যাটার (বিষয়) পারসিউ করতে পারব না। এ জন্য আমরা বিষয়টা শেষ করে দিতে চাই। যদি আর কোনো রেসপন্স না হয় আমরা অন্য কাজে মনোনিবেশ করব। এ বিষয়টা নিয়ে হয়তো আমাদেরকে আর পারসিউ করতে হবে না।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোটদানের ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপ না মেলায় প্রিজাইডিং অফিসারের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে ব্যালট ইউনিট ওপেন করার ব্যবস্থাটি আরপিওতে অন্তর্ভুক্ত করতে চায় কমিশন। বেশ কিছু আইনের সংস্কারের পক্ষেও তারা।
এ বিষয়ে পাঠানো প্রস্তাবের বিষয়ে সাড়ে তিন মাসেও কোনো কিছু জানানো হয়নি কমিশনকে। এতে অসন্তুষ্ট তারা।
প্রশ্ন উঠেছে, এই অসন্তোষটি কি লোক দেখানো?
রোববার নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব আব্দুল হালিম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়। এতে বেশ কড়া ভাষা ব্যবহার করা হয়।
খসড়া বিলটি নিয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে ২৮শে সেপ্টেম্বর জরুরি পত্র পাঠায় কমিশন। কিন্তু জবাব আসেনি। এরপর ১০ই অক্টোবর আরও একটি চিঠি পাঠানো হয়। এবারও কমিশনের চিঠি উপেক্ষা করা হয়।
এবারের চিঠিতে বলা হয়, আরপিওর সংশোধন-সংক্রান্ত খসড়া বিলের অগ্রগতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে আগামী ১৫ই ডিসেম্বরের মধ্যে অবগত করার জন্য শেষবারের মতো বিশেষভাবে সনির্বন্ধ অনুরোধ করেছে।
সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদের বিধান মতে দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা যে নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য সেই বিষয়টিও চিঠিতে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়।
নির্বাচন কমিশন মনে করে, কমিশনের অনুরোধ ও চাহিদা উপেক্ষিত হলে তারা দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে না। এতে নির্বাচন বিষয়ে কমিশনের সক্ষমতা, স্বাধীনতা এবং সরকারের সদিচ্ছা প্রশ্নে জনমনে অনাকাঙ্ক্ষিত সংশয়ের উদ্রেক হতে পারে বলেও ভাবছে তারা।
এই চিঠির বিষয়ে জানাজানি হলে সাংবাদিকরা ভিড় করেন সিইসির কাছে। তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু সময় বেঁধে দিয়েছি, আমাদের প্রত্যাশা ওই সময়ের মধ্যেই তারা রেসপন্স নিশ্চয়ই করবেন। সরকারের বিভিন্ন ব্যস্ততা থাকে ব্যস্ততার কারণে তারা সময় করে উঠতে পারে নাই।
এই চিঠির পর আর অনুরোধ করা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ওই তারিখটা (১৫ই ডিসেম্বর) আসুক। কমিশন বসে তখন একটা সিদ্ধান্ত নেব। এটা কি খুব গুরুত্বপূর্ণ কি না, কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ, তখন আমরা সেটা বিবেচনা করে দেখব।
গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলেই নির্বাচনী আইনে সংস্কার আনতে চেয়েছেন- একজন গণমাধ্যমকর্মীর এমন মন্তব্যের জবাবে সিইসি বলেন, সব কিছুই তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা না। সবকিছুই যে সব সময় অ্যাড্রেস হবে তা তো না। সরকারের নিশ্চয়ই একটা বক্তব্য আছে, সেটা থাকবে।
তিনি বলেন, আমরা যেটা প্রত্যাশা করেছি, সরকারের ওই যুক্তি থাকতে পারে যে, এটার প্রয়োজন নাই। এটা অলরেডি অ্যাড্রেস আছে কোথাও। যদি অ্যাড্রেস হয়ে থাকে সেটাও যদি আমরা জানতে পারি আমাদের আর পারসিউ করার প্রয়োজন পড়ে না।
সিইসি আরও বলেন, তাদেরও তো একটা যুক্তি থাকতে পারে এই প্রস্তাব নিয়ে কারণ অথরিটি তারা। আইন প্রণয়নের অথরিটি সরকার এবং পার্লামেন্ট। তারা যদি মনে করেন না, পর্যাপ্ত আইন রয়ে গেছে, এ বিষয়ে করণীয় কিছু নেই, সেইটুকু আমাদের জানিয়ে দিলে আমরা বিবেচনা করতাম।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন