ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের ১৪ বছর ধরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বিদ্যুতের বেহাল অবস্থার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, দিনে বিদ্যুৎ ব্যবহারই বন্ধ করে দিতে হবে।
রোববার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) আয়োজিত শিল্পে জ্বালানি সংকট সমাধান শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী রিজার্ভের অবস্থায় আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের রিজার্ভের যে অবস্থা, আমরা জানি না সামনে কি হবে। এলএনজি এখন আমরা আনছি না। তিনি জানান, রিজার্ভের বর্তমান অবস্থায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৬ মাস এলএনজি কেনার অবস্থা রিজার্ভে আছে কি না জানি না। তিনি বলেন, এখন সাশ্রয়ী হওয়া ছাড়া উপায় নাই। আমাদের প্রয়োজনে দিনের বেলায় বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধই করে দিতে হবে।
তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ কবে শেষ হবে তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া গেলে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিতাম।
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, আমাদের ভোলাতে কিছু গ্যাস আছে, সেগুলো আমরা সিএনজিতে করে নিয়ে আসবো। সেখানে ৮০ এমএমসি গ্যাস আছে। আমরা দুই-তিন মাসে সেটা নিয়ে আসার চেষ্টা করবো। অপরদিকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে যাচ্ছি। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ পাবো। আরও এক হাজার মেগাওয়াট সোলার প্যানেলের মাধ্যমে উৎপাদন করবো। তখন অনেকটাই সমস্যার সমাধান করতে পারবো।
তিনি বলেন, আজকে যদি আমরা গ্যাস বাঁচাতে চাই তাহলে লোডশেডিং বাড়বে, তখন আপনারাই সমালোচনা করবেন। অথচ একসময় সব জায়গায় বিদ্যুৎ ছিল না। আমরা চাইলে এসি বন্ধ রাখতে পারি। বিদ্যুৎ ব্যবহার কমাতে পারি। সারাদেশে যে পরিমাণ এসি চলে, তাতেই ৫ থেকে ৬ হাজার মেগাওয়াট চাহিদা আছে। আমরা এসি বন্ধ রাখবো বা কম চালাবো। এতে দুই-তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সেভ হবে। গ্যাস সাশ্রয় হবে। সবাই মিলে যদি রাজি হয় লোড কমাবো তাহলে কিছু গ্যাস রিলিজ হবে।
আমরা কৃষি ও ইন্ডাস্ট্রিতে বিদ্যুৎ বেশি দেওয়ার চেষ্টা করবো। প্রয়োজনে অন্যরা বিদ্যুৎ ব্যবহার কম করবো। প্রয়োজনে দিনের বেলা ব্যবহারই করবো না। বিদ্যুৎ যদি আমরা শিল্পে দেই, তাহলে আবাসিকে সাপ্লাই কমাতে হবে। সেটা করলেই আবার মিডিয়ায় অনেকেই অনেক কথা বলবেন।
তৌফিক-ই-এলাহী বলেন, যুদ্ধের সময় তো আমাদের কিছুই ছিল না। তখনও আমরা চলেছি। এখনও পারবো। আমরা শপথ নেবো, দরকার হলে দিনের বেলায় কোনো বিদ্যুৎ ব্যবহার করবো না।
সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী যখন শিল্পকারখানা খুলে দিলেন, তখন অনেক বুদ্ধিজীবী এর বিরোধিতা করেছিলেন। তখন শিল্পকারখানা খুলে দেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল, যার ফলে সারাদেশের জিডিপি নিম্নমুখী বাংলাদেশের জিডিপি ছিল উর্ধ্বমুখী। চলমান এই জ্বালানি সংকটে প্রধানমন্ত্রীকে এখন সেই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বিটিএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসাইন প্রমুখ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন