ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বরাবরের মতই র্যাবের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে একই কথা বলেছেন। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করণ ও সংস্কার ছাড়া র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। আমেরিকান নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত বেনজির আহমদ জাতিসংঘের একটি সম্মেলনে যোগ দিতে আমেরিকা যাওয়ার সুযোগকে জবাবদিহীতা নিশ্চিত করণ ও পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় না বলে উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, র্যাবের জবাবদিহিতা, রাজনৈতিক সহিংসতার প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন। এছাড়া, একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য মানবাধিকার বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা থাকা সদ্য সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে মনোনয়ন নিয়েও নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ পন্থী একটি দৈনিকের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার ১০ মাস পর যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ অবস্থান কী? ওয়াশিংটন কি ইতোমধ্যে ঢাকার নেওয়া ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট? নাকি আরও ব্যবস্থা নিতে হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে পিটার হাস বলেন, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ নিষেধাজ্ঞা এ সম্পর্কিত বিষয়গুলো দেখে। এই বিভাগ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে তখনই যখন জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয় এবং পরিবর্তন আসে। অর্থাৎ মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হয়।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কোন ব্যক্তি একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য মনোনয়ন জবাবদিহিতা বা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় না।
অর্থাৎ, সেই সম্মেলনে গুম-ক্রসফায়ারের জন্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পাওয়া গোপালগঞ্জের কুখ্যাত পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদকে পাঠানোতে পরোক্ষভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, তবে, আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, নিষেধাজ্ঞাগুলো অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ক বা সহযোগিতাকে সীমাবদ্ধ করবে না। বাণিজ্য, উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাসহ অনেক ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে বিস্তৃত সম্পর্ক এবং গভীর সহযোগিতা রয়েছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ সঠিক পথে যাচ্ছে? আপনার কি কোনো পরামর্শ আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে পিটার হাস বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস কওে, গণতন্ত্রের শক্তি জনগণের কণ্ঠস্বর শোনার সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশসহ যেকোনো দেশের নির্বাচনের বিষয়ে আমেরিকার নীতি হচ্ছে, দেশের জনগণ যেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পরিচালিত অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের সুযোগ পায় এবং তার মাধ্যমে তাদের সরকার নির্বাচন করতে পারে। তিনি জানান, আমেরিকাকোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভয়ভীতি দেখানো ও রাজনৈতিক সহিংসতার খবর উদ্বেগজনক। এমন পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। আমরা সব পক্ষকে আইনের শাসনকে সম্মান করার এবং সহিংসতা, জবরদস্তি, ভীতি প্রদর্শন বা প্রতিশোধ নেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই। সেইসঙ্গে সাংবাদিকরা যেন স্বাধীন ও পরিপূর্ণভাবে নির্বাচনের খবর সংগ্রহ করতে পারে, সেজন্য তাদেরকে হয়রানি ও সহিংসতা থেকে নিরাপত্তা দিতে হবে।
পিটার হাস বলেন, শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি ও তার সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচন চায়। আমরা এই শব্দগুলোকে স্বাগত জানাই এবং সরকার কীভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে তা দেখার অপেক্ষায় আছি। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ যেসব গঠনমূলক উদ্যোগ নেবে, আমরা তা সমর্থন করি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন