দেশে শতকরা ১০ থেকে ১২ ভাগ মানুষ থ্যালাসেমিয়া এবং হিমোগ্লোবিন-ই-এর বাহক। অর্থাৎ দেড় কোটি মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের জীন বহন করছে। থ্যালাসেমিয়া একটি রক্তস্বল্পতা জনিত মারাত্মক বংশগত রোগ। বাবা এবং মা উভয়ই এই রোগের জীন বহন করলে সন্তানেরা এই রোগ নিয়ে জন্ম গ্রহণের সম্ভাবনা থাকে।
বাংলাদেশে এখন এই সঠিক কোন তথ্য উপাত্ত নেই তবে বিভিন্ন গবেষণা হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বলা হয় দেশে প্রতি বছর আট হাজার থেকে ১৫ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্ম নেয়। এর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।
থ্যালাসেমিয়াকে আমাদের দেশে থেকে নির্মূল করতে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। বিয়ের আগে প্রত্যেক তরুণ-তরুণীর রক্তের একটি পরীক্ষা (হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফরসিস) করে জেনে নিতে হবে সে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক কিনা? বাহক নির্ণয়ের পাশাপাশি থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য দেশে পর্যাপ্ত ও উন্নত মানের চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং মানুষকে আরো সচেতন করতে হবে- যাতে তারা তাদের বাহক নির্ণয় পরীক্ষা করে এবং বাহকে বাহকে বিয়ে বন্ধ করে।
গতকাল বৃহষ্পতিবার ‘বিশ্ব থ্যালসেমিয়স দিবস ২০২২’ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি ও হেমাটো কেয়ারের যৌথ উদ্যোগে ‘থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ- জাতীয় পরিকল্পনায় বাহক নির্ণয়ের গুরুত্ব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা জানানো হয়। এবার এ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘থ্যালাসেমিয়া: নিজে জানি, যত্নবান হই এবং অপরকে সচেতন করি। ’ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ অডিটরিয়ামে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও বিকন ফার্মাসেটিক্যালের ব্যবস্থপনা পরিচালক মোহাম্মদ এবাদুল করিম, এমিরেটাস অধ্যাপক এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং হেমাটোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. এম এ আজিজ, প্রাক্তন সচিব ড, মিহির কান্তি মজুমদার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর ও প্রাক্তন সচিব এন আই খান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব মো, এনামুল হক এবং বাংলাদেশ থ্যালসেমিয়া সমিতির সম্মানিত উপদেষ্টা সৈয়দ দিদার বখত। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ থ্যালসেমিয়া সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ড. এম এ মতিন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি ও বি এম টি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাফরুহা আক্তার অনুষ্ঠান শেষে সবাই ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ‘বিশ্ব থ্যালসেমিয়স দিবস ২০২২’ উপলক্ষ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুরে বাহক নির্ণয় কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিক উদ্ধধোন করেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জনস্বাস্থ্য প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য থ্যালাসিমিয়া একটি গুরুতর সমস্যা। এটি মূলত জীনগত ও জন্মগত একটি রক্তশূন্যতাজনিত রোগ। আক্রান্ত রোগীদের সারাজীবন চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। যেমন বারবার রক্ত পরিসঞ্চালন করা, আয়রন কমানোর ঔষধ সেবন ইত্যাদি। সামষ্টিক চিকিৎসা ব্যায় অনেক বেশি। যেহেতু বংশগত রোগ তাই পিতা ও মাতা উভয়েই যদি থ্যালাসিমিয়ার বাহক হন তবে তাদের সন্তানের থ্যালাসিমিয়া রোগ হতে পারে। বাহকের নিজের তেমন কোন শারীরিক সমস্যা থাকে না। তাই বাহক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়েই সচেতনতা ও জ্ঞানের অভাব থাকে। রক্তের হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রফরেসিস পরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই বাহক নির্ণয় করা যায়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়া মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে বাহক নির্ণয়ের কোনো বিকল্প নেই। আমি সাধুবাদ জানাই বাংলাদেশ থ্যালসেমিয়া সমিতি ও হেমাটো কেয়ারকে যে তারা ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদেশর তরুণদের সঙ্গে নিয়ে এই কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে। বিকেন ফার্মা সিটিকেলের মতো মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানি সামনে এগিয়ে এসে তাদেরকে যেভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছে তাঁর জান্য এম পি এবাদুল করিমকে ধন্যবাদ। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যদি সামনে এগিয়ে আসে তাহলে যেকোনো অসাধ্যকে সাধন করা সম্ভব। আমাদের সকলের উচিত থ্যালসেমিয়া প্রতিরোধের জন্য একযোগে কাজ করা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন