শত শত ধরনের পণ্য দেশে উৎপাদন হলেও আমদানি হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। এর প্রমাণ পাওয়া যায় আমদানি ব্যয়ের চিত্র দেখে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অক্টোবরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৬২.৫০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত অক্টোবর মাসে ৭১১ কোটি (৭.১১ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরণের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। গত বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৪৩৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ২৭৪ কোটি ডলার। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই একক কোনও মাসে পণ্য আমদানিতে এত বেশি অর্থ ব্যয় হয়নি।
আমদানির আড়ালে বিদেশে টাকা পাচার না হয়, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত। তিনি বলেন, বিনিয়োগকে কেন্দ্র করে আমদানি ব্যয় বাড়লে অর্থনীতির জন্য সেটা ভালো। তার মতে, আমদানি বাড়া মানে বিনিয়োগ বাড়া। আর বিনিয়োগ বাড়া মানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া, সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হওয়া।
তবে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে বাড়ছে ডলারের চাহিদা। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়েছে। তবে এখনও ভয় পাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে মনে করেন ড. জায়েদ বখত। তিনি উল্লেখ করেন, রফতানি আয় যেহেতু বাড়ছে, সেহেতু ভয়ের কোনও কারণ নেই। তবে প্রবাসী আয় বাড়ানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ .৩৭ শতাংশ। এছাড়া আগস্টে বেড়েছে ৭৩ শতাংশ। জুলাইতে বেড়েছে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ২১ শতাংশ। আর জুনে বেড়েছে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৪৪ শতাংশ। সার্বিকভাবে অর্থ বছরের প্রথম চার মাসে ( জুলাই থেকে অক্টোবর) আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৫১.৩৯ শতাংশ।
এদিকে আমদানি ব্যয় বাড়াকে দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক বলছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে তারা রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে রফতানির পাশাপাশি রেমিট্যান্স বাড়ানোর দিকে জোর দিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলছেন, যেভাবে আমদানি ব্যয় বেড়েছে তাতে ধরে নিতে হবে অর্থনীতিতে বড় ধরণের উত্তরণ হচ্ছে। এই অবস্থাকে শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের লক্ষণ বলে মনে করেন ড. জায়েদ বখত। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু, মেট্রো রেলসহ বড় বড় প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। এসব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানিতে মোটা অংকের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। সব মিলিয়ে সব খাতে উৎপাদন কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, কাঁচামালসহ সব পণ্যের প্রয়োজন হচ্ছে। সে কারণে আমদানির পরিমাণ বেড়ে গেছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পণ্য জাহাজীকরণের ব্যয়ও বেড়েছে ব্যাপকভাবে। যে কারণে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, জুলাই থেকে অক্টোবর এই চার মাসে ঋণপত্র (লেটার অব ক্রেডিট) নিষ্পত্তির হার (যা প্রকৃত অর্থে আমদানি ব্যয় নামে পরিচিত) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫১ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ে আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার হার বেড়েছে ৫২.২৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশ পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ব্যয় করেছিল এক হাজার ৭০৬ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আমদানির ক্ষেত্রে ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ৫৮৩ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে ৬৯৯ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। আগের মাস আগস্টে আমদানি হয়েছিল ৬৫৮ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের পণ্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ আমদানি করেছিল ৬ হাজার ৫৫৯ কোটি ডলারের পণ্য।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন