করোনা মহামারীর কারণে দেড় বছরেরও বেশি সময় পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এদিকে ৫ অক্টোবর হল খোলার পর গত ১২ দিনে কোনো শিক্ষার্থীর কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
গতকাল সকাল ৮টা থেকেই বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে আসতে শুরু করেন। কলাভবন, কার্জন হল, এফবিএস ভবনসহ একাডেমিক ভবনগুলোর প্রবেশপথে ছিল শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা। মাস্ক ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি। স্বাস্থ্যবিধিসংক্রান্ত নানা নির্দেশনা টানানো আছে দেয়ালে দেয়ালে। গতকাল প্রথম দিন ক্লাস-পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা টিএসসি, ডাকসুর ক্যাফেটরিয়া, মধুর কান্টিন, বটতলা, ক্যাম্পাস শ্যাডো, মল চত্বর, কার্জন হল কিংবা শহীদুল্লাহ হলের পুকুর পাড়ে আড্ডায় মেতে ওঠেন।
দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিবুল ইসলাম শোয়াইব বলেন, ‘ক্লাসে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। অনেক দিন পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় খুবই ভালো লেগেছে। কারণ অনলাইন ক্লাসে আমাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে।’
টিএসসির ক্যাফেটরিয়ায় অনেক দিন পর খাবার খেয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিম জাহান অর্পিতা বললেন, ‘২০ টাকায় টিএসসি ক্যাফেটরিয়ার দুপুরের খাবারটা অনেক মিস করেছি। একসঙ্গে বন্ধুদের নিয়ে এই খাবারের তৃপ্তি ছিল অসাধারণ। সেই স্বাদ আবারও নেওয়ার সুযোগ হলো।’
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটসহ বেশ কয়েকটি বিভাগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরাসরি পরীক্ষা দিতে পেরে শিক্ষার্থীরা যেমন খুশি, তেমনি পরীক্ষা নিতে পেরে শিক্ষকরাও উৎফুল্ল।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান গতকাল বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষ ঘুরে দেখেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সশরীরে ক্লাস শুরুর মাধ্যমে তা পূর্ণতা পেল। একটি বিষয় খুবই আশাব্যঞ্জক। সেটা হলো, যেসব শিক্ষার্থী ক্লাসে অংশ নিয়েছেন, তারা সবাই টিকা নেওয়া।’
১২ দিনে আক্রান্ত নেই : ঢাবি মেডিক্যাল সেন্টারের পরিচালক ডা. সরোয়ার জাহান মুত্তাকী বলেন, ‘আমাদের কাছে কোভিড আক্রান্ত হয়ে কেউ আসেননি। তবে হালকা জ্বর-সর্দি নিয়ে চার-পাঁচজন শিক্ষার্থী সেবা নিয়েছেন। এটা ঋতু পরিবর্তনের কারণে হচ্ছে। আবার অনেকে বাড়ি থেকে দীর্ঘপথ ভ্রমণ করে আসার কারণেও হচ্ছে।’
‘লস রিকভারি প্ল্যান’ : দীর্ঘদিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় সেশনজটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা। এই আশঙ্কা দূর করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সেশনজট নিরসনে লস রিকভারি প্ল্যান ঘোষণা করেছে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। এই পরিকল্পনায় ছয় মাসের সেমিস্টার কমিয়ে চার মাস করা হবে। যেসব বিভাগে এখনো বার্ষিক সিস্টেম চালু আছে, সেসব বিভাগে এক বছরের পরিবর্তে আট মাসের মধ্যে একাডেমিক কার্যক্রম শেষ করা হবে। তবে সিলেবাসের আকার একই থাকবে।
মধুর ক্যান্টিনে পাল্টাপাল্টি স্লোগান : করোনার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও মধুর ক্যান্টিনে নিয়মিত আনাগোনা ছিল ছাত্রলীগের। কিন্তু ছাত্রদলকে এতদিন দেখা যায়নি। গতকাল সকাল ১০টার দিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী মধুর ক্যান্টিনে প্রবেশ করেন। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান নিয়েছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের দেখে সেøাগান দিতে থাকেন। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও সেøাগান দেওয়া শুরু করলে মধুর ক্যান্টিনে উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার ঘটেনি। বেলা ১১টার দিকে মধুর ক্যান্টিন থেকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা চলে যান।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন