দেশে করোনার টিকাপ্রত্যাশীদের লাইন দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। সাড়ে ৬৬ লাখ নিবন্ধনকারী টিকা নিতে নিবন্ধন করে অপেক্ষায় রয়েছেন। ১৪ লাখের বেশি মানুষ বহুদিন ধরে অপেক্ষায় আছেন অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের জন্য। দ্বিতীয় ধাপে শুরু হওয়া টিকা কার্যক্রমে যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তারা এখন দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায়। এই অবস্থায় সরকারের তরফে ঘোষণা দেয়া হয় ছয়দিনে এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার। সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে কেন্দ্র স্থাপন করে এই টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এজন্য কেন্দ্র নির্বাচন ও টিকাদানকারীদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। সরকারিভাবে চলে প্রচার প্রচারণা।
ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয় স্থানীয় পর্যায়ে। জনপ্রতিনিধিরা নিজেরাও প্রচারণা চালিয়েছেন। শনিবার থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়ে ১২ই আগস্ট পর্যন্ত চলার কথা। কিন্তু এই ক্যাম্পেইন শুরুর দুইদিন আগে পরিকল্পনা পরিবর্তনের কথা বলা হয়। জানানো হয়, ৭ই আগস্ট প্রতীকী গণটিকাদান শুরু হবে। সব কেন্দ্রে বয়স্ক, নারী ও অন্য রোগে আক্রান্তদের টিকা দেয়া হবে। এরপর টিকা মজুত সাপেক্ষে ১৪ই আগস্ট থেকে ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম শুরু হতে পারে। টিকা সংকটের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সরকারি সূত্র জানিয়েছে। যদিও গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি। পরবর্তী পরিকল্পনার বিষয়েও বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। এমন তালগোল অবস্থার মধ্যে টিকা নিতে আগ্রহী মানুষজন বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে টিকার মজুত হাতে না রেখে কেন এমন পরিকল্পনা নিয়ে তা ঘটা করে প্রচার করা হয়েছে?
টিকাদান ক্যাম্পেইনের ঘোষণায় সারা দেশে টিকা গ্রহণের ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে আগে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া টিকা নেয়ার সুযোগ দেয়ায় অনেকে তা গ্রহণ করতে মুখিয়ে ছিলেন। এ ছাড়া প্রতি ইউনিয়নের তিনটি স্থানে কেন্দ্র করায় অনেকের জন্য টিকা গ্রহণ সুবিধা হবে। এমন অবস্থায় ক্যাম্পেইন সীমিত করার ঘোষণায় হতাশা নেমে এসেছে। এতে টিকা গ্রহণে অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
সরকারি হিসাবে গতকাল পর্যন্ত হাতে টিকা মজুত ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ১৬২ ডোজ। ২রা আগস্ট বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন ১ কোটি ৬০ লাখ ৫৮ হাজার ৫২৬ জন। এটা প্রতিদিনই ৬ থেকে ৭ লাখ করে বাড়ছে।
সবাইকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যে ২৫ বছর পূর্ণ হওয়া দেশের যেকোনো নাগরিককে নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে- ১৮ ঊর্ধ্বদের টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হবে ক্যাম্পেইনে। ইউনিয়ন পর্যায়ে হবে টিকাদান ক্যাম্পেইন। বয়স্ক ও অসুস্থদের অগ্রাধিকার থাকবে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে। ১৮ বছরের নাগরিকরাও ৮ই আগস্ট থেকে টিকা পাওয়ার লাইনে দাঁড়াতে পারবেন। কিন্তু এই বয়সের নাগরিকরা কি শুরুতে টিকা পাবেন? এই প্রশ্নটি সামনে এসেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর থেকে ২রা আগস্ট পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে বিভিন্ন টিকা দেয়া হয়েছে মোট ১ কোটি ৩৭ লাখ ৬৬ হাজার ৭৫৮ ডোজ। এরমধ্যে টিকার ১ম ডোজ নিয়েছেন ৯৩ লাখ ৯৮ হাজার ৮২৯ জন এবং ২য় ডোজ নিয়েছেন ৪৩ লাখ ৬৭ হাজার ৯২৯ জন। এগুলো দেয়া হয়েছে অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকার ফর্মুলায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি কোভিশিল্ড, চীনের তৈরি সিনোফার্ম, ফাইজার ও মডার্নার টিকা। ৪ঠা আগস্ট বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন ১ কোটি ৬৬ লাখ ৮৯ হাজার ৩৫ জন। তবে গত কয়েকদিনের নিবন্ধনের গতিতে দেখা যাচ্ছে ৬ থেকে ৭ লাখ টিকাপ্রত্যাশী নিবন্ধন করছেন। পক্ষান্তরে গত এক সপ্তাহ ধরে আড়াই থেকে প্রায় ৩ লাখ মানুষ টিকা নিচ্ছেন প্রতিদিন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রথম ডোজ নেয়া ৫৮ লাখ ২০ হাজার ৩৩ জনের মধ্যে সাড়ে ১৪ লাখের মতো মানুষের দ্বিতীয় ডোজ নেয়া বাকি আছে। এদের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকারই দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। কেননা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো দুই কোম্পানির দুই ডোজের টিকা গ্রহণের কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।
গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে এক সভা শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছিলেন, ১০ই আগস্টের পর থেকে ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা ছাড়া চলাচল শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। মন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়। সমালোচনার মুখে তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন।
ওদিকে টিকার ক্যাম্পেইনের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পরবর্তী পরিকল্পনা প্রকাশ করেনি। এ বিষয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অধিদপ্তরের একজন মুখপাত্র মানবজমিনকে জানান, অন্যান্য বিষয়ে তারা তথ্য দিতে পারলেও টিকার বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন