‘আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠনের পোস্টারকে ঘিরে বিতর্কে আসার পর আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির পদ খোয়ানো আলোচিত-সমালোচিত রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এখন তার বিরুদ্ধে কী কী মামলা দেওয়া যায়, সে বিষয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
গেল বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে গুলশানের বাসা থেকে তাকে আটক করে র্যাব। তার বাসা থেকে বিদেশি মদ, অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, ক্যাসিনো সরঞ্জাম, বিদেশি মুদ্রা ও হরিণের চামড়া জব্দ করা হয়েছে। পরে ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও ব্যক্তিদের সম্মানহানি করার অপচেষ্টার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার দেখিয়েছে র্যাব।
শুক্রবার দুপুরে র্যাব সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, জয়যাত্রা টেলিভিশনের কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র নেই। জয়যাত্রার মিরপুরের অফিসে অনেক সরঞ্জামাদি পাওয়া গেছে যেগুলো স্যাটেলাইট টিভির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। বিটিআরসির সহযোগিতায় এসব মালামাল জব্দ করা হচ্ছে। সেখানে টেলিযোগাযোগ আইনে কী মামলা করা যায় সেটা দেখা হচ্ছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পারি- তিনি বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সম্মানীয় ব্যক্তিদের সম্মানহানি করে আসছিলেন। তিনি রাষ্ট্রীয় কয়েকটি সংস্থার বিরুদ্ধেও অপপ্রচার করে আসছিলেন। তার বিষয়ে কী কী মামলা করা যায় সেটাও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
মামলার পরে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হবে বলেও জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামে নতুন সংগঠন করে সম্প্রতি আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীরে ঢাকার গুলশানের বাড়িতে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে অভিযান শুরু করে র্যাব।
পরে মধ্যরাতে তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ বলেন, তাকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
কী কারণে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বাসায় মদ, হরিণের চামড়া, ক্যাসিনো বোর্ড, ওয়াকিটকিসহ বেশ কিছু অবৈধ সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।
রাত সোয়া ১২টার দিকে পাঁচ তলা ওই বাড়িতে নিজের ফ্ল্যাট থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীর যখন র্যাব সদস্যদের সঙ্গে বেরিয়ে আসেন, তার মুখে ছিল মাস্ক। পরনে ছিল বেগুনি রঙের জামা ও হলুদ ওড়না।
তিনি উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে দুবার হাত নাড়েন। এসময় তিনি কিছু বলতে চাইলেও সেই সুযোগ পাননি। র্যাব সদস্যরা তাকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।
এসময় একটি ট্রেতে করে কিছু ছুরি এবং লাল একটি লাগেজও র্যাব সদস্যদের নিয়ে যেতে দেখা যায়।
এরপর র্যাবের নির্বাহী হাকিম পলাশ কুমার বসু ওই বাড়ির নিচতলায় সাংবাদিকদের বলেন, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়েছিলেন তারা।
অভিযানে ওই বাসা থেকে বিদেশি মদ, ওয়াকিটকি সেট, বিদেশি মুদ্রা, জুয়া খেলার সরঞ্জাম ও হরিণের চামড়া জব্দ করার কথা বলেন তিনি।
পলাশ বসু বলেন, জব্দকৃত আলামত ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে আরও বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আমরা গ্রেফতার করেছি।
তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইনে মামলা হবে।
হেলেনা জাহাঙ্গীরকে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে- সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক আপনাদের (সাংবাদিক) অতি শিগগিরই ইনফর্ম করব।
হেলেনা জাহাঙ্গীরকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে র্যাবের হাকিম বলেন, র্যাব সদর দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
এরপর রাতেই হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন জয়যাত্রা টেলিভিশনের অফিসে অভিযান চালায় র্যাব। আইপি টেলিভিশটির কোনো কাগজপত্র নেই বলে জানায় আইনশৃংখলা বাহিনী।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর পরিচালক হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা গ্রুপের কর্ণধার।
জয়যাত্রা টেলিভিশনের চেয়ারপারসন হেলেনা নিজেকে আইপি টিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবেও পরিচয় দেন।
হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটিতে সদস্য পদে ছিলেন। কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগেরও উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন তিনি।
‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামের একটি সংগঠনে হেলেনা জাহাঙ্গীরের সভাপতি হওয়ার খবর চাউর হলে সম্প্রতি তাকে দুই কমিটি থেকেই বাদ দেয় আওয়ামী লীগ।
হেলেনা এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরুর আসনে উপনির্বাচনেও প্রার্থী হতেও চেয়েছিলেন তিনি। তবে কোনোবারই তিনি দলের মনোনয়ন পাননি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন