টিভি টুডের এডিটর ইন চিফ মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বলছে যে হয় বাতিল করো না হয় সংশোধন করো। আমার বক্তব্য হচ্ছে যে আমরা এই আইনের বিরুদ্ধে না। কারণ, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এরকম একটি আইন থাকা দরকার। কারণ, যারা সাইবার ক্রাইম করে, ডিজিটাল ক্রাইম করে তাদের জন্য এমন একটি আইন দরকার। আমরা যদি দেখি বিগত এক বছরে নারীদের বিরুদ্ধে, বিশেষ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে চক্রান্ত চলছে। বাংলাদেশ সরকার যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে তখন আন্তর্জাতিকভাবে অনলাইনে তার অপপ্রচার হয়েছে। এখন দেশের বাহিরে অবস্থান করে কিছু কিছু লোক আছে যারা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করতেছে, পুলিশকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করতেছে, দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করতেছে। কাজেই সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন ব্যবহার করে যারা দেশের অস্তিত্ব নষ্ট করতে চায়, মুক্তিযুদ্ধকে ধ্বংস করতে চায়, সরকারের নানা ইতিবাচক উদ্যোগকে চ্যালেঞ্জ করে, জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেয়, ধর্মীয় মৌলবাদকে প্রশ্রয় দেয় তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বা তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার জন্য একটা আইন থাকা দরকার। সেজন্য আমরা মনে করি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দরকার।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিবেদন, বাংলাদেশের সাংবাদিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি সহ নানান বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য মনজুরুল আহসান বুলবুল এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান তুহিন।
মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেছেন, আমাদের আপত্তি ছিল যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নানা অংশের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করা, সাংবাদিকতার স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করা। যেমন: কোন উপজেলার চেয়ারম্যান ত্রাণ আত্মসাৎ করায় চেয়ারম্যান থেকে তাকে খারিজ করে দিল। সেই ত্রাণ আত্মসাতের খবরটি যে সাংবাদিক করলো তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে দিল এই চেয়ারম্যান। আমরা বলছি যে এই যায়গাগুলোতে বন্ধ করা দরকার। প্রকৃত সাংবাদিক যারা প্রকৃত গণমাধ্যম, প্রকৃত মিডিয়ায় তারা তো দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলবেই। এখন এই ক্ষেত্রে যদি এটাকে ব্যবহার করে তাহলে সেখানে আমাদের আপত্তি আছে। আরও কিছু কিছু সমালোচনা আমাদের আছে সেই সমালোচনাও আমরা জানিয়েছে। আইনমন্ত্রীর সাথে কথা বলার পরে আইনমন্ত্রী যেটা বলেছেন যে, সংশোধন করার জন্য এবং সরকার কমিটি করেছে এটা রিভিউ করার জন্য।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি যে এই সংশোধনীটা দরকার যে অংশ মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে। সেই অংশগুলোকে যদি ঠিক করা যায় এবং আইনের অপপ্রয়োগ রোধ করা যায় তাহলে এটা একটা ভালো আইন হিসেবে পরিচিত হবে। আইসিটি আইন যেটি ছিল ১৯৮৪ থেকে ৮৫ সালে করা। সেই আইসিটি আইনের মধ্যে ৫৭ ধারা নিয়ে সবচেয়ে আলোচনা হলো। যখন ৫৭ ধারার ব্যাপক অপপ্রয়োগ হচ্ছিল তখন আমরা যখন সরকারের সাথে কথা বললাম তখন পুলিশের পক্ষ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন দেয়া হলো যে, ৫৭ ধারা সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অনুমতি নিতে হবে। এর ফলে ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যারা মানুষকে অপদস্থ করার জন্য অনলাইনকে ব্যবহার করে, যারা ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টিতে ব্যবহার করে, দেশের মধ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য ব্যবহার করে তাদের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ দরকার।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেছেন, যে প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলো তাদের নির্দিষ্ট কিছু মাপকাঠির উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই মাপকাঠিগুলো বিচার করে একটি প্রতিউত্তর দেওয়া প্রয়োজন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যে প্রতিবেদনে ৪৩৩ জনের কথা বললো সেই তালিকা তারা প্রকাশ করুক। তাহলে সেখানে দেখা যাবে যে আসলে কতজনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের অপরাধ কি। এটা দেখার পর সরকার দেখতে পারবে যে, আসলে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ হয়েছে নাকি অপরাধ ছিল। লন্ডনে বসে কেউ চক্রান্ত করলে সেনাবাহিনীকে উস্কে দিলে সেটাও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ভোলাতে একজন চেয়ারম্যানের দুর্নীতির জন্যে নিউজ করেছেন এটাও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। দুইটার মধ্যে পার্থক্য আছে। দুইটাকে একসাথে মিলিয়ে ফেললে হবে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন