আলোচিত ধর্মীয় বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের আত্মগোপন নিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, আবু ত্ব-হাসহ চারজন ব্যক্তিগত কারণে আত্মগোপন করে থাকলে স্বচ্ছতার প্রশ্নে তাদের ভাষ্য জনসম্মুখে প্রচার করা জরুরি। ব্যক্তিগত কারণে আত্মগোপন করে রাষ্ট্রকে সঙ্কটে ফেলা এবং সমগ্র জাতিকে উদ্বিগ্ন করা নিশ্চয়ই একটি অপরাধ। এই অপরাধ পুলিশ স্টেশনে নয় বরং আদালতেই নিষ্পত্তি হতে হবে।
শনিবার জেএসডির দপ্তর সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবুল মোবারক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘গুম’ এবং ‘আত্মগোপন’ ইস্যুতে রাষ্ট্রে বড় ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে এবং এতে জনগণ গভীরভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। নিয়মিত বিরতিতে এই ধারাবাহিক গুম এবং অজ্ঞাতবাসের নাটক মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই জাতিরাষ্ট্রে চলতে পারে না।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, যারা প্রকৃত অর্থেই গুম হচ্ছেন তাদের সম্পর্কে সরকার নিষ্ক্রিয় এবং গুম হওয়া ব্যক্তির স্বজন বা পরিবারের আহাজারিতে সরকার ন্যূনতম প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করছে না। আর যারা অজ্ঞাতবাস থেকে প্রত্যাবর্তন করছেন তাদের নিয়ে পুলিশের একতরফা বক্তব্য সঙ্কটের নিরসন তো করছেই না বরং তা জনগণের মাঝে ক্রমাগত ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে যা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বিবৃতিতে আ স ম আব্দুর রব বলেন, অপহৃত কোনো ব্যক্তি প্রত্যাবর্তনের পর গুম হওয়া এবং গুমজনিত পরিস্থিতি সম্পর্কে আজ অবধি টু শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করছেন না। এর পেছনে কোনো ভীতি বা ভয়ঙ্কর কোনো নির্মমতা লুকায়িত আছে কি না, তাও রাষ্ট্রের অনুসন্ধান করা উচিত। অজ্ঞাতবাস থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আজ পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি তার পূর্বের অবস্থায় ফেরত আসতে পারছেন না, যা সমাজের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তাদের রহস্যজনক এই নীরবতা রাষ্ট্রের জন্য নিশ্চয়ই মঙ্গলজনক নয়।
এসব স্পর্শকাতর ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোনো অপশক্তি রাষ্ট্রকে বড় ধরনের ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে। সুতরাং গুম এবং আত্মগোপনের রহস্য সরকারকেই উদঘাটন করতে হবে। গুম এবং আত্মগোপনের এই অপসংস্কৃতি থেকে অবশ্যই আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে বলে জেএসডি সভাপতি উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, গত ১০ জুন রংপুর থেকে ঢাকায় আসার পথে রাজধানীর গাবতলী এলাকা থেকে ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান নিখোঁজ হন। এছাড়াও তার সঙ্গে নিখোঁজ হয়েছেন আব্দুল মুহিত, মোহাম্মদ ফিরোজ ও গাড়িচালক আমির উদ্দীন। নিখোঁজের আট দিন পর শুক্রবার রংপুরে বাড়িতে ফিরেছেন ত্ব-হা। রংপুর মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রশিদ জানান, বিকাল ৩টার দিকে তাকে রংপুর নগরের আবহাওয়া অফিস সংলগ্ন মাস্টার পাড়ার শ্বশুরবাড়ি থেকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে সেখান থেকে তাকে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
পুলিশ প্রাথমিকভাবে দাবি করে ব্যক্তিগত কারণে ত্ব-হা ও তার সঙ্গীরা আত্মগোপনে ছিলেন। তবে ব্যক্তিগত কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ জানায় এই মুহূর্তে তারা বলতে পারবেন না। সেটা ভেরিফাই করতে হবে। তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করব। আসলে সব ব্যক্তিগত কারণ তো বলা যায় না।
পরে ডিবি পুলিশ জানায়, দাম্পত্য কলহে অতিষ্ঠ হয়ে ত্ব-হা আদনান স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গিয়েছিলেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানকে উদ্ধারের পর শুক্রবার বিকালে রংপুর নগরীর ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন বলেন, পারিবারিক কারণে গাইবান্ধার ত্রিমোহনীতে বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন ত্ব-হা আদনান।
আলোচিত এই ধর্মীয় বক্তা ও তার সঙ্গীরা ঢাকা থেকে ফিরে তার এক বন্ধুর বাসায় আত্মগোপন করেছিলেন। তার বন্ধুর নাম সিয়াম।
পুলিশ জানায়, তার বন্ধু (সিয়াম) বাসায় ছিলেন না। তার মা বাসায় ছিলেন। তারা একটি ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন। তারা ওই রাতেই ঢাকা থেকে ফিরেছে অন্য কোথাও অবস্থান করেনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন