ঢাকার কেরানীগঞ্জে শ্যালিকাকে পেতে পুঁতা দিয়ে স্ত্রী মোহনা আক্তারকে (২৫) হত্যার পর লাশ গুম করতে চরকদমপুরের একটি পুকুরে লাশ ফেলে দেয় স্বামী ইকবাল হোসেন (৩৫)। মঙ্গলবার দিনব্যাপী তল্লাশি চালিয়ে চরকদমপুরের একটি পুকুর থেকে মানুষের শরীরের হাড়গোড় ও মোহনার মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের ২২ নভেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুরের চরকদমপুর এলাকার ভাড়া বাসা থেকে নিখোঁজ হন গৃহবধূ মোহনা আক্তার (২৫)। গৃহবধূর স্বামী ইকবাল হোসেন (৩৫) তখন প্রচার করেন সাংসারিক কলহের কারণে দুই শিশু সন্তানকে রেখে মোহনা অন্য কারও সঙ্গে অজানার উদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
কিন্তু জীবিকার তাগিদে প্রবাসে থাকা (লেবানন) মোহনার মা রহিমা বেগম তার মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি মানতে পারছিলেন না। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরে আসেন। গত ১১ জুন তিনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় গিয়ে মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন।
১২ জুন পুলিশ মোহনার স্বামী ইকবালকে আটক করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। ইকবালের কথাবার্তায় সন্দেহ হয় পুলিশের। একপর্যায়ে ইকবাল মোহনাকে হত্যার পর লাশ গুমের কথা স্বীকার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল স্ত্রীকে হত্যার কারণ হিসেবে জানিয়েছে, শ্যালিকা আরিফা আক্তারের (২০) সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। শ্যালিকাকে সে বিয়ে করে ‘বউ’ বানাতে চায়। কিন্তু এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় স্ত্রী মোহনা। শ্যালিকাকে পাওয়ার জন্য সে স্ত্রীকে হত্যার পর গুমের উদ্দেশ্যে লাশ বাসার পাশের পুকুরে ফেলে দেয়।
বুধবার এসব তথ্য জানান দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ।
মোহনার ফুফু হালিমা আক্তার জানান, উপজেলার বাস্তা ইউনিয়নের বটতলী গ্রামের মৃত আব্দুল হকের ছেলে ইকবালের সঙ্গে প্রায় ৭ বছর পূর্বে বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের ভাওয়ারভিটি গ্রামে মামার বাড়িতে বড় হওয়া মোহনার। মোহনার বিয়ের পর ছোট মেয়ে আরিফাকে তাদের কাছে রেখে মা রহিমা বেগম জীবিকার তাগিদে লেবাননে পাড়ি জমান।
আরিফা বড়বোনের সংসারে আসার পর দুলাভাই ইকবালের সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক তৈরি হয়। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে আরিফাকে বিয়ে দিয়ে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু আরিফা স্বামীকে রেখে দুলাভাইয়ের সঙ্গে একাধিকবার পালিয়ে যায়। এ নিয়ে কয়েকবার বিচার সালিশ হলেও সমাধান হচ্ছিল না।
একপর্যায়ে এলাকাবাসী অবৈধ সম্পর্কের কারণে ইকবাল ও আরিফাকে মারধর করলে দুই বছর আগে স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে ইকবাল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পেছনে চরকদমপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় উঠে। কিন্তু তারপরও ইকবাল ও আরিফার মধ্যে যোগাযোগ ছিল।
মোহনার মা রহিমা বেগম বলেন, আমি বিদেশে থাকায় ছোট মেয়ে আরিফা বড়মেয়ের সংসারে থাকতো। আরিফার সঙ্গে ইকবালের সম্পর্কের বিষয়টি আমি শুনতে পাই। বহু কষ্ট করেও তাদের অবৈধ সম্পর্ক থেকে ফেরানো যায়নি। গত বছরের ২২ নভেম্বর জানতে পারি, মোহনা বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। এটা আমার বিশ্বাস হয়নি। দেশে ফিরে গত ১১ জুন পুলিশের দ্বারস্থ হই। পরদিন পুলিশ ইকবাল ও আরিফাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার কথা স্বীকার করে ইকবাল।
তিনি আরও বলেন, মেয়ের হত্যাকারীর বিচার চাই। আমার ছোটমেয়ে জড়িত থাকলে তারও বিচার চাই।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, মোহনার মায়ের কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা ইকবাল ও আরিফাকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করি। কিন্তু তারা নানাভাবে টালবাহানা করে সত্য লুকানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ইকবাল মোহনাকে হত্যার কথা স্বীকার করে এবং আরিফাকে পেতে ইকবাল মোহনাকে হত্যা করেছে বলে জানায়।
ইকবালের বরাত দিয়ে ওসি আরও জানান, ২১ জুন রাতে মসলা বাটার পুঁতা দিয়ে ইকবাল মোহনার মাথায় আঘাত করে তাকে হত্যা করে। এরপর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। এ সময় মোহানার ব্যবহৃত মোবাইলটিও সেখানে ফেলে দেয় সে।
ইকবালের স্বীকারোক্তি মতে, মঙ্গলবার ওই পুকুরে তল্লাশি চালিয়ে মানবদেহের কিছু হাড়গোড় ও মোহনার মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে হাড়গোড়গুলো মোহনার কিনা সেটা নিশ্চিত হতে ডিএনএ টেস্ট করা হবে। ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়ে বুধবার ইকবালকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
শীর্ষনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন