সিলেট সদর উপজেলার শিবের বাজারের দীঘিরপাড় গ্রামে মূল বাড়ি অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেনের। নগরীর তালতলায় নিজের বাড়িতেই দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বাস করতেন। গত ৩০ এপ্রিল বিকেল তিনটায় শিপা বেগম স্বজনদের ফোন করে তার স্বামীর মৃত্যুর খবর জানান। তিনি বলেছিলেন, ডায়াবেটিস নীল হয়ে তার স্বামী মারা গেছেন। শিপার কথা বিশ্বাস করে স্বজনরা মৃত্যু নিয়ে কোনো সন্দেহ না করে আনোয়ার হোসেনের লাশ গ্রামের বাড়িতে সমাহিত করেন। খটকা লাগে আনোয়ারের মৃত্যুর এক মাস না যেতেই তার স্ত্রীর বিয়ের খবরে।
শিপা বেগমের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার রণকেলী গ্রামে। স্বামীর মৃত্যুর ১০ দিনের মাথায় তিনি শাহজাহান চৌধুরী মাহি নামে এক যুবককে বিয়ে করেন। কানাইঘাটের ঝিঙ্গাবাড়ির উপরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মাহিকে দীর্ঘদিন ধরেই ভালোবাসতেন। বিয়ের পর শিপা জানান, তাদের আগে থেকেই প্রেমের সম্পর্ক ছিল, তাই দুজনে বিয়ে করেছেন। প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর আনোয়ার হোসেনের রেখে যাওয়া বাসাতেই নতুন স্বামীকে নিয়ে বসবাস করছিলেন শিপা।
ভাইয়ের বিয়ের ১০ দিন পর ভাবির বিয়ে নিয়ে সন্দেহ হলে খোঁজখবর নেন আনোয়ার হোসেনের ভাই মনোয়ার হোসেন। পরবর্তীতে তিনি মামলা করেন। পরে গ্রেপ্তার করা হয় শিপাকে। গ্রেপ্তারের পর শিপাকে রিমান্ডে নিলে তিনি পুলিশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন।
জানা গেছে, সিলেট জেলা বারের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন হত্যার আগেই জেলা ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান চৌধুরী মাহির সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন শিপা বেগম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের দুজনের পরিচয়। কয়েকদিন মোবাইল ফোনে কথা বলার পর দুজনের সাক্ষাৎ হয়। আইনজীবী আনোয়ার হোসেন প্রতিদিন সকালে কোর্টে যাওয়ার পর মাহি আনোয়ার হোসেনের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। ৫ দিনের রিমান্ড হলেও মাত্র দুদিনে শিপা এসব তথ্য জানান বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়।
এদিকে, আনোয়ার হোসেনের ময়নাতদন্তের জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) ইয়াছিন আলী আদালতে লাশ কবর থেকে উত্তোলনের জন্য আবেদন করলেও এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আদেশ হয়নি বলে আজ বৃহস্পতিবার জানান। তিনি বলেন, ‘আদালতের আদেশ পেলে আইনজীবী আনোয়ার হোসেনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলন করা হবে।’
শিপা বেগম রিমান্ডে পুলিশকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন জানিয়ে ওসি আরও বলেন, প্রথমে তিনি কোনো তথ্য দিতে না চাইলেও পরে দিতে শুরু করেন। তবে, তদন্তের স্বার্থে কোনো তথ্য প্রকাশ করতে রাজি হননি ওসি ইয়াছিন আলী। তিনি বলেন, ‘মামলার অগ্রগতি হচ্ছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া শিপা ও মাহির কললিস্ট সংগ্রহের জন্য পুলিশ আবেদন করেছে। কললিস্ট পেলে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
মাহি ও শিপা ছাড়া মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন, শিপার মা গোলাপগঞ্জের রণকেলী গ্রামের আজমল আলীর স্ত্রী রাছনা বেগম, কতোয়ালি থানার রায়নগর ১০৪ নম্বর বাসার মোতাহির আলীর ছেলে এনামুল হাসান, জৈন্তাপুরের হরিপুর গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার ছেলে এসএম জলিল, বিমানবন্দর থানার কালাগুল এলাকার মৃত কালা মিয়ার ছেলে জাকির আহমদ, গোয়াইনঘাটের ছোটখেল গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে ফয়সল আহমদ ও সুবিদবাজার এলাকার লন্ডনী রোডের নাইমার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন