শেখ হাসিনার গুম-খুনের রাজনীতি-৩২
শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম-খুন করে শাস্তির বদলে র্যাবের কর্মকর্তাদের মিলেছে একের পর এক পুরস্কার। খুনের জন্য পিপিএম বা বিপিএম পাওয়ার ঘটনা তো এখন সবারই জানা।
“শেখ হাসিনার গুম-খুনের রাজনীতি” শীর্ষক ধারাবাহিক প্রতিবেদনে আজ আমরা তুলে ধরব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদল নেতা শামীম হাসানকে প্রকাশ্য দিবালাকে গুম করার কথা।
কে এই শামীম হাসান?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের শিক্ষার্থী শামীম হাসান ছাত্র রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। শেখ হাসিনার স্বেচ্ছাচারী শাসনামলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন সব কর্মসূচিতে তিনি ছিলেন সরব। মেধা ও যোগ্যতার স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রদলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিল।
শামীম ২০০০-০১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদে ভর্তি হন। ২০০৮ সালে স্নাতক শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু, রাজনৈতিক কারণে শামীমের শিক্ষাজীবন স্থবির হয়েছিল।
ছাত্রলীগের সন্ত্রাস আর পুলিশের বাধার মুখেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কর্মসূচিগুলো অত্যন্ত মেধার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। আর এটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। তালিকা ধরে ধরে বিরোধী দল ও মতের নেতা-কর্মীদের হত্যা অথবা গুমের তালিকায় উঠে আসে মেধাবী এই ছাত্রদল নেতার নাম। এই তালিকা ধরেই তাকে ২০১১ সালের ২৮শে নভেম্বর রাজধানীর হাতিরপুল এলাকায় মোতালিব প্লাজার সামনে থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুম করে র্যাব-৩ এর সদস্যরা। তার সাথে আরো তিনজনকে তুলে নেয় এই ডেথ স্কোয়াড। আজ অবধি সেই মেধাবী তরুণের খোঁজ মেলেনি।
ঘটনার পর পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি মিলনায়তনে এক সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন শামীম হাসানের পরিবার।
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে শামীমের ভাই সাইমুন ইসলাম অভিযোগ করেছিলেন যে, প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক দোকানদাররা তাদেরকে জানিয়েছিলেন র্যাব-৩ এর একটি দল তার ভাইকে ধরে নিয়েছে।
শামীমের ছোট ভাই বলেন, তার ভাইয়ের সঙ্গে থাকা আরো তিন জনকে ধরে নিয়ে যায় র্যাব-৩।
এ ঘটনায় সেই বছরের ৩রা ডিসেম্বর শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন তার পরিবার। কিন্তু, মেধাবী এই ছাত্রদল নেতার সন্ধান আর মেলেনি।
এর আগেও শামীম হাসানকে একবার গ্রেফতার করা হয়েছিলো। সেই ঘটনার বিবরণ দিয়ে গুম হওয়া শামীম হাসানের ছোট ভাই জানান, ২০০৭ সালে তার ভাইকে জরুরি বিধিমালায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু, অভিযোগ না পাওয়ায় সেবার আদালত তাকে খালাস দেন।
শামীম হাসানের সন্ধান চেয়ে তার মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ যেনো থামছেই না। বিলাপ করতে করতে তিনি শুধু একটাই কথা বলেন, “আমার ছেলেকে এনে দেন”।
##
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন