ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে কিশোরীকে ধর্ষণে জন্ম নেওয়া ছেলেশিশুটি পিতৃপরিচয়হীন বেড়ে উঠছে। অথচ গ্রাম্যসালিশে সাড়ে ৪ লাখ টাকায় রফাদফা করেছেন মাতুব্বররা। নির্যাতিতা পেয়েছেন দুই লাখ টাকা। বাকি টাকা এখনো মেলেনি।
ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে লজ্জায় ধর্ষণের শিকার কিশোরী ও তার পরিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে ছোট্ট ভাড়াবাসায় আশ্রয় নিয়েছেন।
কিশোরীর পিতা বলেন, আমার মেয়েকে রবি নামে এক যুবক ধর্ষণ করেছে। রবি আমার মেয়েটিকে বিয়ে করে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে জন্ম নেওয়া শিশুটি পিতার পরিচয় পাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার চর গোসাইপুর গ্রামে জনৈক ব্যক্তির ১৪ বছর বয়সী মেয়ে রাতে টয়লেটে যায়। সেখান থেকে একই গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে সেলুনের কারিগর রবি মিয়া জোরপূর্বক ধরে টয়লেটের পাশে নিচু জমিতে নিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। পরে ঘটনা কাউকে বললে মেয়েটিকে হত্যার ভয় দেখায় সে।
সময় গড়ালে মেয়েটির শারীরিক অবয়ব দেখে তার মা-বাবা ধারণা করে লিভার সংক্রান্ত কোনো রোগে আক্রান্ত হয়েছে মেয়েটি। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা যায় মেয়েটি আট মাসের গর্ভবতী। পরে মেয়ের বাবা স্থানীয় চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড মেম্বারসহ সবাইকে বিষয়টি অবহিত করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার হাসপাতালে গত ৭ জানুয়ারি কিশোরীটি একটি ছেলেসন্তান জন্ম দেয়।
এ ঘটনাটি নিয়ে গত ডিসেম্বর মাসে চর গোসাইপুর বাজারে সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বাশারের মার্কেটে তার উপস্থিতিতে সালিশ হয়। সালিশে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় মাতুব্বর আনোয়ার হোসেন বাবুল, বজু সরদার, আব্দুর রহিম, রাসেল হায়দার, সুধন মিয়া, আক্তার মিয়াসহ অনেকে।
সালিশে রায় হয়- ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে যদি বাচ্চাটি রবির হয়ে থাকে তাহলে সে বাচ্চার দায়িত্ব নেবে। এ সময় সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু বাচ্চা হওয়ার সময় চিকিৎসা খরচ বাবদ ২ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। বাকি টাকা এখনো পাওয়া যায়নি। সালিশের পর রবি অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করে সংসার করছে।
এ ব্যাপারে আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়ে রাতের বেলা টয়লেটে যাওয়ার পথে জোর করে রবি ও আরেক সহযোগী ধরে নিয়ে যায়। রবি ধর্ষণ করায় আমার মেয়ে গর্ভবতী হয়ে ছেলেসন্তান জন্ম দেয়। বিচারে সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা হয় দুই ছেলের ওপর। পরে বাশার চেয়ারম্যান আমাকে ডেকে নিয়ে বাচ্চা ডেলিভারির সময় ২ লাখ টাকা দিয়েছেন। আমি চাই মেয়ের জন্ম দেওয়া শিশুটি রবিকে পিতা হিসেবে যেন স্বীকৃতি পায়।
এ বিষয়ে রবি মিয়া যুগান্তরকে বলেন, আমি ধর্ষণ করিনি। আমাকে আমার বাড়ির লোকজন ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। আড়াই লাখ টাকা দিয়েছেন। হারুন মিয়ার ছেলে সোহেল নামে আরেকজনের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা নিয়েছে মাতুব্বররা। কোনো কিছু না করেও জরিমানা দিতে হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাশার বলেন, আনোয়ারের মেয়ে ৮ মাসের প্রেগনেন্ট হওয়ার পরে আনোয়ার নিজে আমার কাছে এসে ঘটনা জানালে আমি তাকে পরামর্শ দিলাম মামলা করতে। কিন্তু সে বলল থানায় গিয়েছিল দেরি হওয়াতে নাকি মামলা নেবে না। তখন বারবার আমাকে অনুরোধ করার পরে আমরা কয়েকজন বসে যে দুই ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদেরসহ তাদের অভিভাবককে ডেকে সালিশ করলাম। তখন রবিকে আড়াই লাখ টাকা ও সোহেলকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করলাম। তার মধ্যে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা আদায় করা হয়।
তিনি বলেন, দুইজনই একে-অপরের ওপর দোষ চাপাতে চেষ্টা করে। পরে বললাম বাচ্চা হওয়ার পরে ডিএনএ পরীক্ষা শেষে যে শনাক্ত হবে সেই ছেলে ওই বাচ্চাকে পিতার স্বীকৃতি দিতে হবে। আনোয়ার মিয়া বিচার মেনে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে টাকা নিয়েছেন। বাকি টাকা পরে দেওয়ার কথা থাকলেও ছেলেরা দেয়নি বলে এখনো দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে নবীনগর থানার ওসি আমিনুর রশিদ বলেন, উভয়পক্ষের সম্মতি থাকলে আন-অফিসিয়াল আপস-মীমাংসা করতে পারে। কিন্তু এ বিষয়ে আমি কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন