সচিবালয়ে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের গলা চেপে ধরার একটি ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। আটকে রাখা এবং তার ওপরে নির্যাতনকারী হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেসা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। প্রথম আলোর সাংবাদিককে তিনি কোনো নির্যাতন করেননি, তবে তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন— এমনটাই দাবি করেছেন তার স্বামী পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন আল রশিদ কাজী।
মামুন আল রশিদ বলেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেসা বেগম আমার স্ত্রী। তিনি রোজিনার গলা চেপে ধরেননি।
তিনি বলেন, “ভিডিও দেখানো হচ্ছে যে একজন নারী রোজিনা ইসলামের গলায় হাত দিয়েছেন ওই নারীর পরিচয় আপনারা আগে জানেন। ওনি সেখানকার একজন ‘এও’ (প্রশাসনিক কর্মকর্তা)। আর তাকেই জেবুন্নেসা বলে দুনিয়ায় রটনা হয়ে গেছে। এত বড় একটা ঘটনা, এটা আগে যাচাই করতে হবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওই নারী জেবুন্নেসা বা কোনো উপসচিব না। ওই নারী যেহেতু স্বাস্থ্যেই বসে সেহেতু আপনারা যাচাই-বাছাই করলেই তার পরিচয় পেয়ে যাবেন। যাচাই করলেই সত্যটা বের হয়ে আসবে। এরকম একটা বিষয়ে একজনের নামের পাশে আরেকজনের নাম দিয়ে....যেহেতু অতিরিক্ত সচিব পাওয়া গেছে, সেহেতু এটা আলোচনার বিষয়। তবে আমার প্রত্যাশা থাকবে পরিচয়টা কনফার্ম হয়ে নেন। তারপর সত্যের ওপর যত কিছু দরকার সেটা লেখেন।’
কীভাবে জেবুন্নেসা নামটি নির্যাতনকারী হিসেবে সামনে এলো প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সেদিন মন্ত্রণালয়ের কোনও একটা সভা ছিল। সেখান থেকে ফেরার পথে তিনি সচিব মহোদয়ের রুম হয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন এবং ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তবে সেখানে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পরে বিষয়টা তাকে দেখতেও বলা হয়।’
তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে কে তার নামটি দিলো এবং কিছু ভ্যারিফাই না করে কেন তার নাম নির্যাতনকারী হিসেবে প্রকাশ করা হলো, তা আমার বোধগম্য না।’
জেবুন্নেসার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জেবুন্নেসা গত দুই দিনে কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই। তবে ওই নির্যাতনকারী যে জেবুন্নেসা— এইটা আপনাদের প্রমাণ করতে হবে। না জেনে এই হয়রানির কোনও মানে হয় না।’
রোজিনা ইসলামের সঙ্গে যা হয়েছে একজন সচিব হিসেবে বিষয়টা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে এরকম হওয়া উচিত না। সাংবাদিকরা অত্যন্ত অত্যন্ত বড় রোল প্লে করে থাকেন। তাদের মাধ্যমে জনগণ দেশের সব তথ্য পেয়ে থাকেন। এ ব্যাপারে আর মন্তব্য করার অবকাশ নেই। সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করবে এটা সবাই চায়।’
এদিকে মঙ্গলবার (১৮ মে) স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. জাহিদ মালেক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগমসহ সংশ্লিষ্টদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তথ্য নেওয়ার জন্য উনি (রোজিনা ইসলাম) ঘরে ঢুকে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলেছেন, এটাকে কী বলবেন?’
রোজিনা ইসলামকে গলা চেপে ধরা হয়েছে কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “আমরা এ বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত করে দেখব। আমরা জিজ্ঞেস করেছি, এ ধরনের শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে কি না? উনি একজন সিনিয়র অফিসার। উনি বলছেন, ‘শারীরিক নির্যাতন আমি (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা) করিনি বরং আমাকেই নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি (সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম) আমার গায়ে খামচি দিয়েছেন, আমাকে থাপ্পড় দিয়েছেন। আমরা তো তাকে শুধু আটকানোর চেষ্টা করেছি। তারপর তো পুলিশই চলে এসেছিল। এরপর পুলিশের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।’ এ কথাগুলো উনারা আমাকে বলেছেন। পরবর্তী সময়ে এটা নিয়ে যখন আরও আলোচনা হবে, তখন তো সত্য বেরিয়ে আসবে।’’
মন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (রোজিনাকে) শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে এ কথাটা কিন্তু সঠিক নয়। একজন অতিরিক্ত সচিব ও দুইজন উপসচিব পদমর্যাদার নারী ওই সময় উপস্থিত ছিলেন। তারাই প্রাথমিকভাবে রোজিনার সঙ্গে ডিল করেছেন। পরবর্তীতে যখন দেখা গেল রাষ্ট্রের সিক্রেটের বিষয় আসছে, তখন পুলিশকেও ডাকা হয়েছিল। এই বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা আপনাদের সঙ্গে কো-অপারেট করেই কাজ করছি।’
গত সোমবার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের হেনস্তার শিকার হন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। তাকে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখার পর শাহবাগ থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং মামলা করা হয়। পরদিন মঙ্গলবার আদালতে হাজির করার পর তাঁর রিমান্ড নামঞ্জুর করে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
পূর্বপশ্চিমবিডি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন