জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ঝালকাঠির রাজাপুরে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। খুনের মামলায় হুকুমদাতা হিসেবে ১২ নম্বর আসামি করা হয়েছে মো. আমিনুল ইসলাম ওরফে সুমনকে। তিনি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
গত সোমবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার চর হাইলাকাঠি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মো. হালিম খলিফা (৪৫) মঠবাড়ী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও একই এলাকার মৃত মজিদ খলিফার ছেলে। এ ঘটনায় ওই রাতেই নিহতের স্ত্রী সুখি আক্তার বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় ছয়-সাতজনকে আসামি করা হয়। মামলার এজাহারভুক্ত ১ নম্বর আসামি মন্টু খলিফা, ৩ নম্বর আসামি মন্টুর স্ত্রী শিউলি বেগম ও ৮ নম্বর আসামি সেলিম খানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ২ নম্বর আসামি মো. তুহিন খান একজন সেনা সদস্য। তিনি ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। বর্তমানে টাঙ্গাইল সেনানিবাসে কর্মরত।
নিহতের স্বজনরা জানায়, হালিম ও মন্টু একে অন্যের আত্মীয় ও প্রতিবেশী। তাঁদের মধ্যে বাড়ির পাশে আড়াই শতাংশ জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। হালিমের দখলে ছিল ওই জমি। বিরোধীয় এই জমি কেনার জন্য মন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করতেন ইউএনও আমিনুল ইসলাম সুমন। মন্টুরাও চাইছিলেন সুমনের কাছে জমি বেচলে ঝামেলা কমে যাবে। সুমনের হুকুমেই হালিমকে হত্যা করা হয় বলে মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে পরিকল্পিতভাবে মন্টুর নেতৃত্বে আসামিরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে হালিমের ওপর হামলা চালায়। প্রথমে নিহত হালিমকে কিল-ঘুষি ও লাথি মারে। এতে হালিম মাটিতে পরে গেলে তাঁকে আসামিরা চেপে ধরে। এ সময় ইউএনও আমিনুল ৪ নম্বর আসামি উজ্জলের মোবাইল ফোনে কল করেন। উজ্জল ফোনটি রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দেন। আমিনুল ফোনের অন্য পাশ থেকে হালিমকে হত্যার নির্দেশ দেন। পরে ২ নম্বর আসামি তুহিন খান রামদা দিয়ে কোপ দেন। এতে হালিমের কোমরের ডান পাশের নিম্নাংশে গভীর ক্ষত হয়। হামলায় হালিমের স্ত্রী সুখি বেগম (৩৫), সুখির দুই ভাই লিটন তালুকদার (৪৮) ও সাইফুল তালুকদার (২৬) আহত হন। গুরুতর অবস্থায় তাঁদের রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে চিকিত্সক হালিমকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদের ভর্তি করা হয়।
রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবুল খায়ের মাহামুদ রাসেল বলেন, ‘অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে হালিমের মৃত্যু হয়। তাঁর মৃতদেহ রাতেই থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।’
নিহতের শ্যালক সাইফুল তালুকদার অভিযোগ করেন, মন্টু খলিফা এর আগে তাঁর ভগ্নিপতির আড়াই শতাংশ জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে ওই জমি ভোগদখলে নেওয়ার জন্য মন্টু প্রতিবেশী সুমনের কাছে বিক্রির পাঁয়তারা করেন। সুমন ইউএনও থাকার সুবাদে প্রশাসনিক সুবিধা পাবেন বলে ধারণা ছিল তাঁদের। সুমনও ওই জমি কেনার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। এর পর থেকে বিরোধ আরো প্রকট আকার ধারণ করে। শেষে তাঁর ভগ্নিপতিকে হত্যা করা হলো। তিনি সব আসামির বিচার চান।
বাবুগঞ্জের ইউএনও মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। ওখানে আমার গ্রামের বাড়ি, ওরা আমার আত্মীয়-স্বজনও নয়। তাদের উভয় পরিবারের মধ্যে আগে মামলা ছিল। বাদীপক্ষ মনে করে, আমরা অন্য পক্ষকে সহযোগিতা করি, এটা তাদের ভুল ধারণা। এটা ওদের নিজেদের বিষয়। এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
রাজাপুর থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। রাতেই এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন