নাড়ির টানে বাড়ি যাওয়া, আবার কর্মের তাগিদে কর্মস্থলে যাওয়া দুই দিকের মানুষের ঢল এখন মাওয়া ঘাটে। কোনো স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বালাই নেই এই ঘাটে। মাওয়া শিমুলিয়া ঘাটে ১৮টি ফেরী দিয়ে দুই পাড়ের মানুষে পারাপার করছে বিআইডব্লিউটিসির কর্তৃপক্ষ। সোমবার সকাল থেকে মাওয়া ঘাটে দেখা যায় ঘরমুখো মানুষের জটলা। অপরদিকে বাঙলাবাজার থেকে ছেড়ে আসা ফেরীগুলোও যাত্রীতে টইটুম্বর। গাদাগাদি করে ভরে আসছে ফেরীগুলো। সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার তাতেও থামছে না মানুষের যাতায়াত।
বরিশালের ঝালকাঠির যাত্রী ব্যবাসায়ী সোবহান জানান, ঢাকায় ছেলে মেয়ে স্ত্রী নিয়ে ঈদ করেছি। এখন বাড়িতে মা, বাবা আত্মীয় স্বজন আছে তাদের সাথে দেখা করা জরুরী। তাই যাচ্ছি। ঢাকা থেকে আসছে ১ হাজার ৫০০টাকা খরচ হয়ে গেছে। ঝালকাঠি পর্যন্ত যেতে আরো কতোটাকা লাগবে জানি না। তার পরেও ঈদে বাড়িতে যেতে পারিনি তাই জরুরী ভিত্তিতে বাড়িতে যেতে হচ্ছে। আল্লাহর উপর ভরসা করে করোনা মহামারী মাথায় নিয়েই যাচ্ছেন তিনি।
প্রচণ্ড কষ্ট, চরম ভোগান্তি আর করোনার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কর্মস্থলে ফিরছে ঢাকামুখী মানুষ। ঈদুল ফিতরের পরের দিন থেকে ঢাকামুখি মানুষের ঢল নেমেছে। বন্ধ হয়নি ঢাকা থেকে বাড়ি যাওয়ার মানুষের বহর। চার দিন ছুটি শেষ হওয়ার পর থেকে খুলতে শুরু করেছে কর্মস্থল; যার কারণে অনেকেই কাজে যোগ দিতে কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। তবে চলমান কঠোর লকডাউনে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় এর আগে ঢাকা ছাড়তে যতটা কষ্ট ও মৃত্যুঝুঁকি নিতে হয়েছিল, ঢাকায় ফিরতেও তেমনটিই করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকাগামী যাত্রীরা।
দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষের ভোগান্তিটই সবচেয়ে বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কর্মস্থলমুখী অনেকেরই অভিযোগ, যাওয়ার সময় ফেরী বন্ধ করে দিয়ে এ বছর দক্ষিণবঙ্গের মানুষের সাথে যে আচরণ করা হয়েছে তা ছিল খুবই নিষ্ঠুর। যাদের প্রয়োজন ছিল তারা ঠিকই বাড়িতে গেছেন, তবে মানাতে পারেননি কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব। উল্টো বাড়তি টাকা খরচ করে করোনার চরম ঝুঁকি নিয়ে ঠাসাঠাসি করে বাড়তি পৌঁছেছেন। এবার একইভাবে আবার ফিরতে শুরু করেছেন।
পটুয়াখালি থেকে মাওয়া ঘাটে এসেছেন আব্দুল জলিল মাদবর। তিনি জানান, যাওয়ার সময় ফেরী বন্ধছিল। ফজর নামাজের সময় এসে মাওয়া ঘাটে নেমেছি। সন্ধ্যার পরে ফেরীতে পার হয়েছি। দিনভর মাওয়া ঘাটে প্রচন্ড গরমে রোজা রেখে অবর্ননীয় কষ্ট করেছি। তার পরেও মা-বাবা, ভাই বোন, ভাতাজিসহ সকল আত্মীয় স্বজনদের সাথে ঈদের নামাজ পড়ে ঈদ করতে পেরেছি তাতেই ঈদের ঘরে ফেরার কষ্ট ভুলে গেছি। তবে বাড়ি থেকে বাঙলাবাজার ঘাটে আসতে টাকা দ্বিগুন খরচ হলেও সাথে সাথে ফেরী পাওয়ায় কষ্টটা লাগব হয়েছে। টাকা দ্বিগুন খরচ হলেও ভালো লাগছে। ঈদের আনন্দ খুবই ভালো লেগেছে।
এভাবেই ছোট ছোট গাড়ি মিশুক, অটো, রিক্সা বা ছোট পিকাপ ভ্যানে করে ছুটছেন কর্মস্থলে অপরদিকে বাড়িতে যাচ্ছেন সমান তালে। করোনা মহামারীর কোন ছোঁয়া লাগেনি তাদের মনে। কোন যাত্রীর মনের মধ্যে করোনা মহামারির কোন আভা লক্ষ করা যায়নি।
বিআইডাব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়েত আহমেদ জানান, যানবাহন ও যাত্রীদের নির্বিঘ্নে পারাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। এ নৌরুটে বর্তমানে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। ১৭টি ফেরি দিয়েই উভয় পাড়ের লোকজন পারাপার করা হচ্ছে। তবে গাড়ির উঠার আগেই দুই পাড়েই লোক উঠে ভরে যাচ্ছে ফেরী। যাত্রীর চাপ অনেক বেশী।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন