ঘড়ির কাঁটায় বিকেল সাড়ে তিনটা। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার সেতুর ওপরে হাজারো ঘরমুখী মানুষের ভিড়। সেতুর হাঁটাপথ ধরে ব্যাগ- বোঁচকা টেনে নিয়ে পায়ে হেঁটে চলছেন আমিনবাজার সেতুর ওপারে। ওখানে রাস্তার দুই পাশে যাত্রীর অপেক্ষায় বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান, লেগুনা। সকাল থেকে মধ্য রাত- গত কয়েকদিন ধরে এমন চিত্র চলছে এই সড়কজুড়ে।
তবে, বুধবার (১২ মে) চিত্রটা যেন অন্য দিনের তুলনায় একটু ভিন্ন। অফিস ও পোশাক কারখানা ছুটি হওয়ায় দুপুরের পরই পরিবহন সংকট চরম আকার ধারণ করে। ফলে রাস্তায় চলাচল করা বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান, মোটরসাইকেল দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে মানুষ। যে যেভাবে পারছে ধাক্কাধাক্কি করে কোনো রকমে জায়গা করে নিচ্ছে পরিবহনগুলোতে।
এই সুযোগে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে দূরের গন্তব্যে বাস বন্ধ থাকায় মাইক্রোবাস চালকরা যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বাসে যেখানে সিট প্রতি ভাড়া ৫০০ টাকা, তারা সেখানে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন। এমন জিম্মিদশায় উপায় না পেয়ে ৮ থেকে ১০ গুণ বেশি ভাড়া দিয়েই প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে ছুটছে মানুষ।
আমিনবাজার সেতু পার হয়ে ট্রাকস্ট্যান্ড। সেখানে যেতেই মাইক্রোবাস চালকদের হাঁকডাক। বোঝা গেল তারা উত্তরের তিনটি পথ- রংপুর, নাটোর-রাজশাহী এবং বগুড়া-নওগাঁর দিকে ছেড়ে যাবে।
সেখানে দাঁড়াতেই বেশ কয়েকজন চারপাশে ঘিরে ধরে জানতে চাইল কই যাব। চট করে রংপুর বলাতেই, ‘ওই যে হায়েস গাড়ি’ বলে হাত ধরে নিয়ে যেতে উদ্যত হল দুইজন। এরমধ্যে ভাড়া কত, জানতে চাইলে বলল আপনারা কয়জন? দুইজন বলাতে বলল ৭ হাজার টাকা দেবেন। সবশেষে সাড়ে ৬ হাজার টাকার কমে হবে না বলে জানিয়ে দিলেন তারা।
এই কথার রেশ কাটতে না কাটতেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মাসুদ নামে মধ্য বয়সের এক ব্যক্তি এলেন সেখানে। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম। কিন্তু কুড়িগ্রামে যাওয়ার সরাসরি কোনো যান না থাকায় প্রথমে যেতে হবে রংপুর। সেখান থেকে বাড়িতে। কিন্তু বাঁধ সাধল ভাড়া। সাড়ে ৩ হাজার টাকার কমে নেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিলেন তারা। শেষ পর্যন্ত তিনি ৩২শ’ টাকা পর্যন্ত বললেও তারা রাজি হলেন না।
মাসুদ সময় নিউজকে বলেন, গতকাল তার এক সহকর্মী ২৫শ’ টাকায় রংপুর গেছেন। তার বাড়ি লালমনিরহাট। কিন্তু একদিনের ব্যবধানে এক হাজার টাকা বেড়ে গেছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার বাস বন্ধ রেখেছে। কিন্তু মানুষের যাওয়া তো বন্ধ নেই। ঈদে মানুষ বাড়ি যাবে। এখন বেশি মানুষ একসঙ্গে যাওয়ায় করোনার ঝুঁকিও বাড়ছে। আবার ভাড়াও বেশি।’
উল্লেখ্য, ওই দুইজনের মধ্যে একজন মাইক্রোবাসটির চালক। অপরজন ট্রাক স্ট্যান্ডের ‘দালাল’ বলে পরিচিত। যিনি যাত্রী ডেকে দেওয়ার বিনিময়ে কিছু টাকা পাবেন চালকের কাছ থেকে।
সেখানেই রাজশাহীর যাত্রী ডাকতে দেখা গেল এক ব্যক্তিকে। তিনিও নিজ উদ্যোগে এগিয়ে এসে বললেন ‘রাজশাহী গেলে ২৫শ’ টাকা। এসি মাইক্রো আছে। আর মাত্র দুইজন লোক লাগে।’ আর বগুড়া যেতে ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২২শ’ টাকা।
অথচ, সাধারণ সময়ে বাসে ঢাকা থেকে রংপুরের ভাড়া ৫০০ টাকা। রাজশাহী ৪৫০ টাকা এবং বগুড়ায় নেওয়া হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।
শুধু যে মাইক্রোবাস তা নয়, ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান, মোটরসাইকেলও চলছে দূরের গন্তেব্যে। গাবতলির পর্বত এলাকায় ট্রাকের মধ্যে কথা হয় দিনমজুর হোসেন আলীর সঙ্গে। স্ত্রী আর ছেলেসহ কুষ্টিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করবেন। প্রায় দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে একটি পণ্যবাহী ট্রাকে উঠতে পেরে যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন। তবে তাকেও জনপ্রতি ভাড়া গুনতে হবে ৬০০ টাকা করে।
বিকল্প যান হিসেবে স্বল্প দূরত্বে যাচ্ছে সিএনজি ও অটোরিকশা। তারাও চার থেকে পাঁচ গুণ ভাড়া বাড়িয়ে গন্তেব্যে যাচ্ছে। আমিনবাজার থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত সিএনজি চালিত অটোরিকশা জন প্রতি ভাড়া নিচ্ছে ৭০০ টাকা। আর অটোরিকশাগুলো সাভার পর্যন্ত ভাড়া নিচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন