বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক শ্রমবাজার প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। জীবিকা সংকটে আছেন দেশে ফেরা ৭০ শতাংশ প্রবাসী কর্মী। করোনা মহামারী শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সোয়া বছরে বাংলাদেশ থেকে ১১ থেকে ১২ লাখ কর্মী বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল। এরমধ্যে তিন লাখ কর্মীকেও বিদেশ পাঠানো সম্ভব হয়নি। এসব কর্মীরা বিদেশ যাওয়ার লক্ষ্যে তাদের পাসপোর্ট ইস্যু ও জমা এবং প্রয়োজনীয় ট্রেনিংও সম্পন্ন করেছিল।
এছাড়া দেশে এসে আটকা পড়ে আর যেতে পারেনি এবং অপেক্ষায় আছে এমন কর্মীর সংখ্যা আরো প্রায় ২ লাখ। এর বাইরে বৈদেশিক কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট খাতে কর্মরত আরো কয়েক লাখ কর্মী এখনো কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারেনি।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যানুসারে, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে প্রতিমাসে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ হাজার কর্মী বিদেশে গেছে। কিন্ত গত বছর থেকে করোনা মহামারী শুরু পর জনশক্তি রপ্তানি ব্যাপক মাত্রায় কমেছে। গত বছর এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ মাস ধরে জনশক্তি রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
এর আগে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রথম তিন মাসেও গড়ে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি কর্মী গেছেন বিদেশে। এ হিসাবে বৈদেশিক কর্মসংস্থান চালু থাকলে গত বছর শেষ ৭ মাসে নতুন করে অন্তত পাঁচ লাখ কর্মী বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল।
দেশে ফেরা প্রবাসী কর্মীদের নিয়ে জরিপ করেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি ও রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)। তিন সংস্থার জরিপেই প্রবাসীদের দুর্দশার চিত্র উঠে এসেছে। প্রবাসীদের দ্রুত সহযোগিতা করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে সংস্থাগুলো।
আইওএম সম্প্রতি এক হাজার ৪৮৬ জন বিদেশফেরত কর্মীর ওপর জরিপ করে বলেছে, জীবিকা সংকটে আছেন দেশে ফেরা ৭০ শতাংশ প্রবাসী কর্মী। প্রায় ৭৫ শতাংশ জানায়, তারা আবার অভিবাসনে আগ্রহী। তাদের মধ্যে ৯৭ শতাংশই করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে যে দেশে কাজ করতেন, সে দেশেই আবার অভিবাসনে ইচ্ছুক।
তবে জরিপে ৫৫ শতাংশ বলেছে, তাদের ওপর ঋণের বোঝা রয়েছে। তবে প্রবাসীদের ক্ষেত্রে বা নতুন করে বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে চিত্রটি বেশ বিপরীত। বিশ্বে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে ছুটিতে আসেন দুই লাখের বেশি প্রবাসী। তারা ফিরতে পারছেন না। সব প্রস্তুতি শেষ করেও যেতে পারেননি এক লাখ নতুন কর্মী। এই তিন লাখ কর্মী প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন এবং বিপন্ন হয়ে পড়েছে তাদের পরিবার। দেশে ফিরে কোনো কাজ পাচ্ছেন না তারা। পাচ্ছেন না কোনো সাহায্যও। অনেকে ধার-দেনা করে সংসার চালাচ্ছেন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন