সরকার ঘোষিত লকডাউন কার্যত ভেঙে পড়েছে। মানুষ লকডাউনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে যে যার মতো করে ছুটে বেড়াচ্ছে। লকডাউনের দুরাবস্থা সবচেয়ে বোঝা যায় ফেরিঘাট গুলোতে, লঞ্চঘাট গুলোতে। সেখানে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। আর মানুষ ঠকানোর জন্য বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে, কিন্তু বিজিবিও মানুষের প্রতিপক্ষ হতে পারছে না। বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এই লকডাউন ফর্মুলা আবিষ্কার করেছিলেন কতিপয় আমলা। সেই আমলাদের অদ্ভুত এবং উদ্ভট লকডাউনে জনগণ যেনো এখন সরকারের প্রতিপক্ষ হয়ে গেছে। জনগণ এই লকডাউনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষুব্ধ, হতাশ এবং কৌতুক অনুভব করছেন। যেমন এই লকডাউনকে আমলাদের একটা অদ্ভুত এবং উদ্ভট আবিষ্কার বলেই মনে করছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে বলা হচ্ছে যে, মানুষ ঘরে থাকবে, অন্যদিকে সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। গণপরিবহনের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে যে, আন্তঃনগর বাস চলাচল চলবে না। মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেছেন যে, আমরা এটা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো, আবার রাতের আধারে আন্তঃনগর বাস বাস চলছে। যদি শহরের ভেতরে গণপরিবহন চলতে পারেন তাহলে আন্তঃনগর গণপরিবহনে কি সমস্যা এটি আমলারাই ভালো বলতে পারেন। এতে কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধান নেই।
শপিংমল, দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। খুলে দেওয়া হয়েছে বাজার-হাট। তাহলে লকডাউন কার জন্য, কিসের জন্য প্রযোজ্য সেটিই একটি বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশে এখন সবকিছুই চলছে, কিন্তু কাগজে-কলমে লকডাউন। আর এর ফলে যারা বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাভাবনা করোনা নিয়ে, যারা বৈজ্ঞানিক গবেষণা করেন, তারা বাংলাদেশে একটি ভয়াবহ সংকটের আশঙ্কা করছেন ঈদের পরে। তবে সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন যে, আমলাদের এই উদ্ভট সিদ্ধান্ত সরকারকে জনগণের প্রতিপক্ষ করছে। একটি সরকারের প্রধান কাজ হলো জনগণের কল্যাণ করা। জনগণের আস্থা নিয়ে, জনগণের মঙ্গলের জন্য বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া। একটি সরকারকে জনগণ নির্বাচিত করে সে কারণেই। কিন্তু জনগণ যদি কখনো সরকারের সিদ্ধান্ত অমান্য করে, সরকারের সিদ্ধান্তকে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করে বা প্রতিবাদ করে, তাহলে বুঝতে হবে যে সেই সরকারের ওপর জন অনাস্থা তৈরি হয়েছে।
বাস্তবে বাংলাদেশে যে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে, যে সরকার ২০১৮ এর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে, সেই সরকারের প্রতি একধরনের জন আস্থা ছিলো। বিশেষ করে এই সরকারের অধীনে পদ্মা সেতু, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, এমনকি করোনা মোকাবেলার মতো জটিল কাজে জনগণ প্রশংসা করেছে এবং আস্থাশীল থেকেছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের দৃঢ়তায় অধিকাংশ জনগণই আস্থা রেখেছে। কিন্তু এই আস্থায় এবার চির ধরাচ্ছে আমলারা।
দ্বিতীয় দফা যখন করোনা সংক্রমণ শুরু হলো তখন আমলারা একের পর এক উদ্ভট সিদ্ধান্ত দেওয়া শুরু করলেন। এই সিদ্ধান্তগুলো কি সরকারকে জনগণের প্রতিপক্ষ বানানোর? দীর্ঘ ১২ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারকে জনগণের কাছে জনগনের কাছে সমালোচিত করার জন্য? কারণ সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে যেভাবে জনগণ সরকারের সমালোচনা করছে, তা গত ১২ বছরে করে নি। প্রশ্ন উঠেছে যে, এই সিদ্ধান্তগুলো কারা দিচ্ছে। আমরা দেখছি যে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হচ্ছে। তাহলে এই লকডাউনের প্রজ্ঞাপন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কোন এখতিয়ার বলে জারি করে সে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জারি করতে পারে অথবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জারি করতে পারে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংক্রামক ব্যাধি আইন অনুযায়ী এই রকম লকডাউন জারির একমাত্র কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মন্ত্রি পরিষদ বিভাগ কেন বারবার লকডাউন দিচ্ছে সেই প্রশ্নের উত্তর নেই।
এই সমস্ত সিদ্ধান্তগুলো যে দেওয়া হচ্ছে তার মধ্যে সমন্বয় নেই। একদিকে বলা হচ্ছে যে, আন্তঃনগর পরিবহন বন্ধ থাকবে, অন্যদিকে ফেরি চালু করা হয়েছে। ফলে মানুষ তার গন্তব্যে পৌঁছতে আরো বেশি পয়সা গুনতে হচ্ছে। সরকারের আমলাদের উচিত ছিলো জনগণের আস্থা নিয়ে, জনগণের জন্য সুবিধা হয় এমন একটা বিধি ব্যবস্থা কায়েম করা। কিছু কিছু সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া নয়, যে সিদ্ধান্তগুলো হাস্যকরই শুধু না বাস্তবায়ন অযোগ্য। এমন সব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যে নির্দেশনায় আর যাই হোক লকডাউন করা হবে না। এখন এটি কি অদক্ষতা না পরিকল্পিত ভাবেই জনগণকে সরকারের প্রতিপক্ষ বানানোর জন্য আমলারা করেছেন, সেটি বিচার-বিবেচনা করে দেখার বিষয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন