ছেলের কাছে ভরণপোষন চাওয়ায় বৃদ্ধ বাবাকে পিটিয়ে দুই হাত ভেঙে দিয়ে ঘরে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে ছেলের বিরুদ্ধে। একদিন পড় খবর পেয়ে নাতনি (বড় ছেলের মেয়ে) তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দিতে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন।
গতকাল শনিবার দুপুরে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় এ ঘটনা ঘটেছে। ওই বাবার নাম মো. সেকান্দার আলী সিকদার (৮৪)। তার বাড়ি উপজেলার সূর্যমনি ইউনিয়নের ইন্দ্রোকুল গ্রামে।
সেকান্দার আলী সিকদার জানান, তার চার ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে সিদ্দিক সিকদার ঢাকায় থাকে। মেঝ ছেলে মিজান ও সেজ ছেলে সবুজ বাড়িতে থাকে। ছোট ছেলে ফিরোজ সিকদার তার শ্বশুর বাড়ির কাছে আলাদা বাড়ি করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকে। মেয়ে তাজ মহলকে বিয়ে দিয়েছেন অনেক আগেই। বর্তমানে তিনি তার স্ত্রী ময়না বেগমকে নিয়ে নিজ ঘরে জীবনযাপন করছেন।
তিনি কেঁদে বলেন, ‘কোনো ছেলেরা তাদের একটি বারের জন্যও জিজ্ঞেস করে না কেমন আছো বাবা। কীভাবে তোমাদের দিন চলে। কি খাও তোমরা?’
এক সময় খুদার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তার স্ত্রী ময়না তার মেয়ে তাজ মহলের কাছে চলে যায়। তিনি মাঝে মধ্যে মানুষের কাছে হাত পেতে চললেও করোনার কারণে তা হয়ে ওঠে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনার দিন শনিবার দুপুরের দিকে সেকান্দার আলী সিকদারের সেজ ছেলে সবুজ বাড়ির বাঁশ কাটছিলেন। ওই খবর পেয়ে তিনি (সেকান্দার আলী সিকদার) বাড়ি গিয়ে সেজ ছেলেকে বাঁশ কাটার কারণ জানতে চান। এসময় ছেলের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়।
তিনি ছেলেকে বলেন, ‘আমার সম্পদ ভোগ করতে হলে আমাকে এবং তোমার মাকে ভরণপোষন দিতে হবে।’ এতে সেজ ছেলে সবুজ ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তার হাতে থাকা বাঁশ কাটা দায়ের উল্টো দিক দিয়ে তাকে বেধরক পিটিয়ে পিটিয়ে ঘরে আটকে রাখেন।
আজ রোববার দুপুরে এই খবর পেয়ে বড় ছেলে সিদ্দিকুর রহমান সিকদারের মেয়ে (নাতনী) মরিয়ম বেগম ওই বাড়িতে গিয়ে তার দাদাকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করেন।
কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আখতারউজ্জামান বলেন, ‘বৃদ্ধের হাত এক্সে করে দেখা গেছে তার বাম হাতের মধ্য অংশ ও ডান হাতের বৃদ্ধ আঙুল সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে।’
নাতনি মরিয়ম বেগম জানান, তার দুই চাচা বাড়িতে থাকেন। তারাই দাদার সম্পদ ভোগ করেন। অথচ দাদা ও দাদিকে ভরণপোষন দিতে চান না। ভরণপোষন চাইলে মারধর করেন। এর আগেও কয়েক বার তার দাদাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। দাদা নিরুপায় হয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে হাত পেতে জীবন চালায়।
তিনি আরও জানান, রাতে মসজিদে কিংবা কোনো দোকান ঘরের সামনের ব্রেঞ্চে ঘুমান। আর তার দাদি কখনো মেয়ের বাড়ি, আবার কখনো তার বাড়িতে এসে থাকেন।
এ ঘটনায় সেকান্দার আলী বাউফল থানায় সেজ ছেলে সবুজ সিকদারের বিরুদ্ধে এজাহার দাখিল করেছেন। বাউফল থানার ওসি (তদন্ত) আল মামুন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
তিনি দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘অপরাধীকে গ্রেপ্তারে জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে সবুজ সিকদারকে গ্রেপ্তার করা হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন