সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতির পদটি বিতর্কিত করবেন না, সবাই মিলে সম্মানজনক সমাধান খুঁজতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (৬ মে) এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এ কথা বলেন।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদটি অত্যন্ত সম্মানজনক ও গুরুত্বপূর্ণ। শেরেবাংলা একে ফজলুল হকসহ অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাই বর্তমান সভাপতির মৃত্যুর কারণে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সেই পরিস্থিতির কারণে আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। যাতে এই পদের মর্যাদা কোনোরকম ক্ষুণ্ন না হয়।’
তিনি বলেন, ‘এই পদটিকে কোনোভাবেই বিতর্কিত করা ঠিক হবে না। বিতর্কে না গিয়ে সবাই মিলে সম্মানজনক সমাধান খুঁজতে হবে। যাতে সভাপতির পদের মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকে।’
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, কোনো হীন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যাতে সভাপতির এই পদটির মর্যাদা ক্ষুণ্ন না হয়, পদটির মর্যাদা যাতে অক্ষুণ্ন থাকে এ ব্যাপারে সবার কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বর্তমান নির্বাচিত সভাপতির হঠাৎ মৃত্যুর ফলে সম্মানজনক এই পদটির গুরুত্ব ও সম্মানের ব্যাপারে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে, যাতে এই পদটির মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকে।’
গত ৪ মে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির শূন্যপদে নির্বাচন বিষয়ে ডাকা বিশেষ সাধারণ সভায় তুমুল হট্টগোল হয়। পরে এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা।
ওই দিন সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘হট্টগোলের কারণে বিশেষ সাধারণ সভা মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা দাবি করেছেন, সাধারণ সভায় কণ্ঠভোটে এ এম আমিন উদ্দিন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
এরপর গত বুধবার (৫ মে) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির শূন্যপদে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত নির্বাচিত আইনজীবীরা পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘ভোটবিহীন ক্ষমতা দখলের যে চর্চা বর্তমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাসীনরা চালু করেছে, মঙ্গলবারের এ ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা।’
তিনি বলেন, ‘শূন্যপদে সভাপতি কে হবেন সেজন্য মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরুর আগেই বিশেষ সাধারণ সভা স্থগিত করেছেন সম্পাদক। কোনো ধরনের আলোচনা কিংবা সেখানে সভাপতি পদে কোনো নির্বাচন হয়নি।’
‘এ ছাড়া বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছিল সভাপতি পদ পূরণে করণীয় নির্ধারণের জন্য, নির্বাচনের জন্য নয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হলো। যেটি সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসেবে কখনই আমাদের কাম্য ছিল না।’
অন্যদিকে একই বিষয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে বারের কার্যনির্বাহী কমিটিতে নির্বাচিত অপর সদস্যরা পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন।
এসময় সমিতির সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্যা বলেন, ‘মঙ্গলবারের সাধারণ সভায় আমার সভাপতিত্ব করার সিদ্ধান্ত আগেই গৃহীত হয়েছিল এবং তার রেকর্ড আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে।’
উল্লেখ্য, ২০২১-২২ সেশনের সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনে ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি পদসহ আটটি পদে জয়ী হয় সরকার সমর্থক সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা)। অন্যদিকে সম্পাদক পদসহ বাকি ছয়টি পদে জয়ী হয় বিএনপি সমর্থক জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল)। সভাপতি পদে সাদা প্যানেলের প্রার্থী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু নির্বাচিত হন। কিন্তু করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৪ এপ্রিল আবদুল মতিন খসরু ইন্তেকাল করেন। ফলে সভাপতি পদটি শূন্য হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন