মুনিয়াদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা শহরের মনোহরপুর উজির দিঘির দক্ষিণ পাড়ে। সেখানে মুনিয়াদের পৈত্রিক একতলা পাকা দালান আছে। নবম শ্রেণি পর্যন্ত মুনিয়া কুমিল্লায় পড়াশোনা করেন। হঠাৎ কেনো ঢাকায় পড়তে আসা? কোন স্কুল ও কলেজে পড়েছেন? বাবা মারা যাওয়ার পর কিভাবেই বা মুনিয়ার পড়াশোনার খরচ চলতো? সেসব নিয়ে এবার গণমাধ্যমে বিস্তারিত জানালেন মোসারাত জাহান মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া।
নুসরাত বলেন, `বাবা মারা যায় ২৭ সেপ্টেম্বর, তার (মুনিয়ার) টেস্ট পরীক্ষা মেবি অক্টোবরের ২ তারিখ, অংক পরীক্ষা ছিল। দিতে পারেনি, না হয়তো খারাপ হয়েছিল। তার কারণে তাকে টেস্টে অ্যালাউ করেনি। যার কারণে তার বিশাল আকার ক্ষতি হয়েছিল ইডুকেশনাল। সে খুব ডিপ্রেসড হয়েছিল এবং আব্বুর কিছু বন্ধু-বান্ধব ওইবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য হেডমিস্ট্রেসকে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু কোনোভাবেই পরীক্ষার জন্য ফর্ম পূরণ করতে দেওয়া হয়নি। সেবার আর তার পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। এই অবস্থাতেই ৭-৮ মাস কেটে গেল। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না কি করবো।
এরপর একজন পরামর্শ দিল, যেহেতু মুনিয়া সায়েন্সে পড়ত সুতরাং অন্য কোনো বোর্ড থেকে পরীক্ষা দিয়ে ডিপার্টমেন্ট পরিবর্তন করলে অর্থাৎ আর্টস নিলে পরীক্ষা দিতে পারবে। যেহেতু সে সময় ভর্তির টাইম টা প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল তাই অন্য কোনো বোর্ডের স্কুলে তাকে নিতে চাইছিলনা। আমারা কুমিল্লা, সিলেট যোগাযোগ করার পর ঢাকায় ভর্তির সিদ্ধান্ত নেই। অবশেষে ঢাকা ন্যাশনাল বাংলা স্কুলে এক আংকেলের মাধ্যমে ব্যবস্থা করলাম। তারাও রাজি হয়ে গিয়েছিল, যেহেতু মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ভালো রেজাল্ট করলে স্কুলের সুনাম হবে। তাকে সেখানে ভর্তি করার পর হোস্টেলে দেওয়া হয়। হোস্টেলের নাম রেণু মহিলা হোস্টেল। সেখানে দেওয়ার পর আমি প্রতি সপ্তাহে সেখানে যেতাম। সেই স্কুল থেকে সে এসএসসি জিপিএ ৩.২৮ পেয়ে পাস করে।
২০১৮ সালের মে মাসে যখন তার রেজাল্ট আসে তখন আম্মু বিআরবি হসপিটালের আইসিইউতে। এর মধ্যে আমরা সবাই হাসপাতালে। আবার তাকে ভর্তিও করতে হবে। ভর্তি করতে না পারলে একবছর পিছিয়ে যাবে। এরমধ্যে জুন মাসের ১২ তারিখে আম্মু মারা যায়। পরে মুনিয়া বলে সে অনলাইনে আবেদন করেছিল বান্ধবীদের সাথে। সেই আবেদনে মুক্তিযোদ্ধার কোটায় তার কলেজ এসেছে মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। মুক্তিযোদ্ধার কোটায় সে একজনই। সেখানে আমি এবং আমার হাসবেন্ড গিয়ে অভিভাবক হয়ে তাকে ভর্তি করাই। ভর্তি করার পর মুনিয়া আর হোস্টেলে থাকতে রাজি হয়না। পরে তাকে একটি আংকেলের ফ্ল্যাট ভাড়া করে দেই ১১ হাজার টাকায়। সেখানে সে তার হোস্টেলের কিছু মেয়ে ও কলেজের কিছু মেয়ে নিয়ে থাকতো।
মুনিয়ার খরচ গত মাস পর্যন্ত আমরাই চালিয়েছি। আমরা চালিয়েছি বলতে বাবার যে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পাওয়া যেত, বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা সেটা মুনিয়ার নামে করে দেই। তাছাড়া এর বাইরে প্রতি মাসে আরও যা যা খরচ লাগতো সেটা আমরা বহন করতাম।
২০১৯ সালের শেষের দিকে সঠিক তারিখ খেয়াল নাই, মুনিয়া জানায় সে বনানীতে বাসা নিচ্ছে। সেখানেও সে আরও কিছু মেয়ে নিয়েই উঠেছিল। পরবর্তীতে ২০২০ সালের মার্চের শেষ দিকে আমি যখন সব জানতে পারি তখন আমি মুনিয়াকে নিয়ে বাসায় নিয়ে আসি। সে সময় লকডাউনের মধ্যেই তাকে বাসায় নিয়ে আসি।
সবশেষে মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন রাখেন, আপনারা মুনিয়ার পড়াশোনার ব্যাপারে এত কিছু জানতে চাইছেন, এত লিখালিখি করছেন, কিন্তু মুনিয়া যে কবরে সে ব্যাপারে আপনারা কি করছেন?`
পূর্বপশ্চিমবিডি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন