মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেছেন মুনিয়ার ভাই আশিকুর রহমান সবুজ।
রোববার (২ মে) এ মামলা দায়ের করেন তিনি। মুনিয়ার পারিবারিক সূত্র থেকে এই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। শারুন সরকার দলীয় হুইপ ও চট্টগ্রামের সাংসদ সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে। গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওইদিন রাতেই মুনিয়ার বড় বোন বাদী হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে একমাত্র আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেন।
এর আগে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া শারুন চৌধুরীর সঙ্গে মুনিয়ার কিছু কথোপকথনের স্ক্রিনশটের সূত্র ধরে গত ২৭ এপ্রিল বিকেলে একটি সূত্র তার কাছে কিছু তথ্য জানতে চায়।
এ বিষয়ে শারুন গণমাধ্যমকে ওই সূত্রের ব্যাপারে কিছু না বললেও এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, একটি সূত্র মুনিয়ার সঙ্গে কথোপকথনের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে জানতে চেয়েছে, তিনি মোসারাতকে চেনেন কি না? শারুন জানিয়েছেন, মুনিয়ার সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। গত বছর সে ফেসবুকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে।
একটি চ্যাটে শারুন মুনিয়াকে প্ররোচনা দিয়ে লেখেন, ‘তুমি কিছু করলে বসুন্ধরা গ্রুপ শেষ হয়ে যাবে।’
এ ঘটনায় ওই তরুণীর বোন নুসরাত বাদী হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলায় ওই তরুণীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
জানা যায় যে, আলোচিত হুইপপুত্রের সাথে মুনিয়ার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামে নিয়মিত বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীর সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য শারুনকে জানাতেন মুনিয়া। তাদের আলাপের স্ক্রিনশট থেকে জানা যায়, আক্ষেপ করে মুনিয়া শারুনকে বলতেন, ‘আপনার লাইফে আপনার ওয়াইফের আগে যদি আমি আসতাম।’ এর উত্তরে শারুন বলেছেন, ‘আমি ভালো মানুষ না। জাস্ট উপকার করি।’ হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে মুনিয়া আরও লেখেন, ‘আমার আপনার ভেতরে যা হয়েছে ওইটা কেউ জানবে না। আপনি আমার জন্য অনেক করেছেন।’
নিজেদের মধ্যকার এসব চ্যাট নিয়ে অবশ্য উৎকণ্ঠায় ছিলেন শারুন। সেই কথাও জানান মুনিয়াকে। উত্তরে মুনিয়া লিখেছিলেন, ‘জি না, আমি ডিলিট করে দিই সব।’ ছড়িয়ে পড়া স্ক্রিনশটে কথোপকথন কত তারিখের, তা স্পষ্ট নয়।
শারুন-মুনিয়ার চ্যাটিং
ওই কথোপকথনের একটিতে মুনিয়া শারুনকে লেখেন, তিনি ভালো নেই। এরপর লেখেন, ‘উনি তো আমাকে বিয়ে করবে না। কী করব আমি?’ জবাবে শারুন লেখেন, ‘আগেই বলেছিলাম, ওর কথা শুইনো না। ও আমার বউকে বলছে বিয়ে করবে, কিন্তু করে নাই।’
স্ক্রিনশট বিষয়ে শারুন চৌধুরী আরও বলেন, ‘মেয়েটার সঙ্গে আমার গত এক বছরে কোনো যোগাযোগ হয়নি। হোয়াটসঅ্যাপে কোনোদিন কথাই হয়নি।’ চট্টগ্রাম-১২ আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে শারুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগও ওঠে।
তবে ফেসবুকে তার সঙ্গে কথোপকথনের যে স্ক্রিনশট ছড়ানো হচ্ছে সেগুলো মিথ্যা দাবি করে শারুন বলেন, সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ে এই কথোপকথনগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার।
এদিকে, মুনিয়া হত্যা মামলার ফরেনসিক রিপোর্ট পেতে আরো দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই রিপোর্ট হাতে পেলেই উন্মোচিত হবে মুনিয়ার মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য।
গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজ শিক্ষার্থী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে কুমিল্লায় মরদেহ দাফন করা হয়। ময়নাতদন্ত করার পর কেটে গেছে ৫ দিন।
গত ২৬ এপ্রিল গুলশানের একটি অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মুনিয়া আত্মহত্যা করেছেন, তদন্ত করে দেখবে পুলিশ।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম
পাঠক মন্তব্য
These reports are anti-constitutional. No wonder government uses the digital security act to arrests journalists. This report is a clear violation of the privacy of the people. Nowhere in this world, people enjoy freedom where there is no privacy.
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন