আজ বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী বলেছেন যে, টিকা নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অবনতি ঘটবে না। বাংলাদেশে এখন টিকার মজুদ কমে গেছে। ৩০ লাখ ডোজের কম টিকা রয়েছে বাংলাদেশের হাতে। অথচ যেভাবে চুক্তি করেছিল সে অনুযায়ী টিকা পেলে বাংলাদেশে এখন ৭০ থেকে ৮০ লাখ ডোজ টিকা মজুদ থাকার কথা। বাংলাদেশের এই সময় পর্যন্ত প্রকৃত হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৫০ লাখ লোক দুই ডোজ টিকা পাওয়ার কথা এবং ৮০ লক্ষ মানুষের এক ডোজ টিকা পাওয়ার কথা। কিন্তু সিরামের সরবরাহের ঘাটতির কারণেই বাংলাদেশে টিকা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সিরাম অবশ্য বলেছে যে, বাংলাদেশে দেয়ার জন্য তাদের কাছে টিকা মজুদ আছে। ভারত সরকার অনুমতি দিলেই তারা টিকা পাঠাতে পারবে। আর ভারত সরকার পৃথিবীর সব দেশে টিকা সরবরাহ বন্ধ ঘোষণা করেছে। এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য বলে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ভারত থেকে করোনার টিকা এনেছিল একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে। সিরাম ইন্সটিটিউট একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরাম এবং বাংলাদেশ সরকার ত্রিপক্ষীয় এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এই ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তিতে কবে নাগাদ কিভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে সেটির একটি রোল আউট পরিকল্পনাও উল্লেখ আছে। কিন্তু রোল আউট পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারত টিকা দিচ্ছেনা। এখন বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ কামনা করে স্বাস্থ্যসেবা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু ভারতে কেন বাংলাদেশে টিকা রপ্তানি বন্ধ করেছে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কোনো কোনো কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা সাম্প্রতিক সময়ে অমিত সাহার বক্তব্য টেনে আনছেন। পশ্চিমবাংলার নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে এসে সেখানকার প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অমিত শাহ বাংলাদেশ সম্বন্ধে কুৎসিত, অরুচিকর এবং নোংরা মন্তব্য করেছেন। এই মন্তব্যের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন সেটিকে নাকচ করে দিয়েছেন এবং অমিত সাহার জ্ঞানের অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তখন ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে তীব্র ভাষায় তুলোধুনো করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের গণমাধ্যম ভারতের ব্যাপারে কোনোরকম আপত্তি বা কোনরকম নেতিবাচক কথা বলেনি।
ভারতের হাইকমিশনার যিনি যেকোন বিষয়ে বাংলাদেশকে নসিহত দেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে যিনি ভারতের রাজনীতিবিদদের চেয়েও লম্বা-চওড়া বক্তব্য রাখেন তিনিও তখন নিশ্চুপ ছিলেন। আর এখন যখন টিকা নিয়ে একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং বাংলাদেশ টিকা না পাওয়ার এক অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রবেশ করেছে ঠিক সেইসময় বিক্রম দোরাইস্বামী বললেন যে, টিকা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। তাহলে অমিত সাহার বক্তব্য কি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না? ভারতের রাষ্ট্রদূত কি মনে করেন যে অমিত শাহ যা ইচ্ছা তাই বলবেন এবং বাংলাদেশ হজম করবেন। অনেকেই মনে করেন যে, বাংলাদেশের অগ্রগতি উন্নয়ন বিশেষ করে করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশের যে সফলতার কৌশল, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি বিশেষ করে করোনার মধ্যেও বাংলাদেশ ভারতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলছে এটি ভারতের মাথাব্যথা এবং চক্ষুশূল হয়েছে। যখন বিশ্বব্যাংক এই পূর্বাভাস দিয়েছে তখন থেকেই ভারতের মধ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে হিংসা, নিন্দা ইত্যাদি শুরু হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় অমিত শাহার বক্তব্য এবং ঈর্ষা থেকে টিকা বন্ধ কিনা এটা খুঁজে দেখা দরকার। কারণ, ভারত যখনই তার পাশের দেশের সাফল্য দেখে, বন্ধুদের ভালো দেখে তখনই ভারত সেই দেশটির বিরুদ্ধে নানারকম পদক্ষেপ নেয়, নানারকম কাজ করে। টিকা বন্ধ এবং অমিত শাহার বক্তব্য তাই একই সূত্রে গাঁথা কিনা- খতিয়ে দেখা দরকার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন